সকল মেনু

‘বিকশিত হচ্ছে না লাউচাপড়া পর্যটক কেন্দ্র’

Lawchapara-L20131012182035 জামালপুর প্রতিনিধি, ১৩ অক্টোবর:  প্রকৃতির রূপলাবন্যে মনোমগ্ধকর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা বকশীগঞ্জের গারোপাহাড়। প্রকৃতির উজার করা সৌন্দর্যে বিকশিত ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা এ পাহাড়ি জনপদ আনন্দ জুড়িয়ে দেয় প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের মন। এ পাহাড়ের ২৬ একর বনভূমি জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে লাউচাপড়ার ক্ষনিকা পিকনিক স্পর্ট। অপার সম্ভাবনার এ পর্যটন কেন্দ্রটিকে ঘিরে বিনোদন পিপাসি মানুষের প্রবল আর্কষণ। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগের অভাবে এই কেন্দ্রটি বানিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছে না। তাছাড়া এলাকাটিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রাস্তা-ঘাটের অবস্থাও খুবই খারাপ। পর্যটকদের মতে, অঞ্চলটিকে প্রকৃতি আপন রঙে সাজালেও স্থানিয় প্রশাসনের উদাসিনতায় বানিজ্যিকভাবে এর কোন বিস্তৃতি লাভ করছে না। জামালপুরের উত্তরে ভারতের তুরাপাহাড় পাদদেশে সরকারি প্রায় ১০ হাজার একর জায়গা জুড়ে গারো পাহাড়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের পাহাড়ি এ বনভূমিতে জামালপুর জেলা পরিষদ ৯৬ সালে ২৬ একর জায়গা জুড়ে গারোপাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে ক্ষনিকা নামে একটি পিকনিক স্পট। জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। বকশীগঞ্জের কামালপুর মিদ্যাপাড়া মোড় থেকে লাউচাপড়া পর্যটন কেন্দ্র পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কটি প্রতিবেশী শেরপুর জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন।

এক যুগ আগে রাস্তাটি নিমার্ণ হলেও ছোট দুইটি ব্রিজ ও সড়কটি পনু:নিমার্নের অভাবে দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে লাউচাপড়া পর্যটন কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ শেরপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের অবহেলার কারনে রাস্তাটি পুন:সংস্কার না করায় এক যুগেও লাভজনক এ বিনোদন কেন্দ্রের কোন উন্নয়ন ঘটেনি।
এই গারোপাহাড়ে এসে দেখা যাবে হাজারো প্রশান্তির বৃক্ষরাজি পাখিদের কোলাহল ঝরনার কলতানে মুখরিত এ স্পটে ১৫০ফুট উচুঁ পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে ৬০ ফুট সুরম্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার টুরিস্ট কমপ্লেক্সসহ নানা স্থাপনা।
টাওয়ারে দাড়িয়ে চারদিকে তাকালে চোখ পড়ে শুধু পাহাড়ের দূরের ও কাছের আকাশ ছোয়া উচুঁ উচুঁ চূড়া। এ যেন সবুজ গালিচার মোড়া প্রকৃতি। এসব পাহাড়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণার ধারা।
অসংখ্য পাখির কলকাকলি যেন আরেক অধ্যায়। কোথাও গহীন জঙ্গল আবার কোথাও দেখা যায় বৃক্ষহীন ন্যাড়া পাহাড়।
আরও দেখা যায় ওপাড়ে সীমানা পেরিয়ে ভারতের মেঘালয়ের অসংখ্য পাহাড়। ভারত সীমান্ত পাহাড়ের কূলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দর্শন।
এ ছাড়া পায়ে হেটে চারদিকে ঘুরে পাহাড়ের উচুঁ নিচু ও আঁকা বাঁকা পথ চলতে চলতে দেখা যাবে সৌন্দর্যে মাখা বিস্তৃত অঞ্চল। এসব দৃশ্যাবলী দেখে মনে হবে কোন নিপুন চিত্রকর তার রঙের ভান্ডার উজার করে পরম যত্নে অংকন করেছেন মনোলোভা আলপনা।

পাহাড়ের বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে আকাশমনি বেলজিয়াম ইউক্যালিপটাস উডলট কড়ইবৃক্ষ ছাড়াও চেনা অচেনা নানা জাতের লতাগুল্ম আর বাহারি গাছ গাছালির সৌন্দর্য মন্ডিত সবুজের সমারোহ।
লাউচাপড়া, সাতানিপাড়া, দিঘলাকোনা, গারোপাড়া, বালিজোড়া, মেঘাদল শোখনাথপাড়া প্রভূতি গ্রামের গহীন গারো পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা পাশের কুল ঘেষেঁ সবুজের আড়ালে খড়ের অথবা মাটির ঘরে বসবাসরত গারো কোচদের চোখে পড়বে।
আর এরই টানে অসংখ্য পর্যটক শীতের কুহেলিকা আর গানের টানে এখানে এসে ভিড় জমায় প্রতিবছর। তাই শীত মৌসুমের প্রতিদিন অসংখ্য অতিথিদের পদভারে সেই নির্ভত অঞ্চলটিও হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।

এ বিশাল গারো পাহাড়ে রয়েছে নূড়ি পাথর, বোল্ডার পাথর, চিনামাটিসহ অনেক খনিজ সম্পদ। এ পাহাড়ি সম্পদ আহরণে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার উদ্দ্যেগে বিশাল আকারের শিল্প গড়ে ওঠার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে পাশেই কামালপুর স্থলবন্দর থাকলেও পর্যটন কেন্দ্র্রে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ খাবার পানি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পর্যটকরা। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের কারনে বিকশিত হচ্ছে না সাগরে মত গারো পাহাড়ের বিশালময় এ পিকনিক স্পটটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top