সকল মেনু

যুগ যুগ ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রস্তুত হয় ইজতেমার মাঠ

হটনিউজ ডেস্ক:

তাবলিগ জামাতের বৈশ্বিক সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ টঙ্গীর তুরাগতীরের বিশ্ব ইজতেমা। শুধু এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দেশ ও বিদেশের লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটে টঙ্গীর তুরাগ পারে। তাই স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তুরাগ পারের ১৬০ একর জমি তাবলিগ জামাতের জন্য বরাদ্দ দেয়। পরবর্তী সময়ে জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে ইজতেমার পরিধি আরো বাড়ানো হয়। এই বিশাল এলাকাকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত করতে ইজতেমা শুরুর তিন-চার মাস আগ থেকে কাজ শুরু করতে হয়। যুগ যুগ ধরে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সমাধা হচ্ছে মুসল্লিদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে। বাংলাদেশের আনাচকানাচে থেকে তাবলিগের সাথিরা ইজতেমায় স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার জন্য চলে আসেন। সেখানে থাকা দায়িত্বশীলরা তাঁদের যে দায়িত্ব ভাগ দেন, তাঁরা স্বেচ্ছায় ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে সেই কাজই করেন।

কারণ সামর্থ্য অনুযায়ী দ্বিনের সমষ্টিগত কাজে অংশগ্রহণ করা অফুরন্ত ফজিলতের কাজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন শুধু তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আনে এবং তার সঙ্গে কোনো সমষ্টিগত কাজে থাকলে অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৬২)

আমাদের নবীজি (সা.)-ও দ্বিনি কাজে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন। যাঁরা তাঁর সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন, তাঁদের জন্য দোয়া করেছেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পরিখা খননের কাজে আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অংশ নিয়েছিলাম। তাঁরা পরিখা খুঁড়ছিলেন আর আমরা কাঁধে মাটি বহন করছিলাম। তখন রাসুল (সা.) দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের শান্তি ছাড়া প্রকৃত কোনো শান্তি নেই। আপনি মুহাজির এবং আনসারদের ক্ষমা করে দিন। (বুখারি, হাদিস : ৪০৯৮)

তাই ইজতেমার মাঠ প্রস্তুত করার জন্য ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মাদরাসা শিক্ষক-ছাত্র, স্কুল-কলেজের ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ময়দানে কাজ করছে। প্যান্ডেল তৈরির কাজ, রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করে।

স্বেচ্ছাশ্রম দানকালে তাদের যাবতীয় খরচ তারা নিজেরাই বহন করে। শুধু ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতই নয়, ইজতেমা চলাকালেও বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তা ও যাবতীয় সেবায় অনেক মুসল্লি স্বেচ্ছাশ্রম দেন। বিভিন্ন উপদলে আসা মুসল্লিরা নিজেদের মধ্যে কিছু খেদমতের সাথি নির্ধারণ করেন, যারা নিজেদের জামাতের আসবাবপত্র পাহারা, খাবারের ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকেন।

এ ছাড়া তাবলিগ জামাতের ইজতেমা যেন সহজ হয় সে জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেও অনেক সহায়তা করা হয়। ইজতেমা মাঠে স্থায়ী ও পাকা শৌচাগার, অজুখানা, বিদেশি মুসল্লিদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা, অস্থায়ী ভিত্তিতে রাস্তাঘাট, পুল ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। মুসল্লিদের তুরাগ নদ পারাপারের জন্য প্রতিবছরই বেশ কিছু ভাসমান সেতু নির্মাণ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা।

এই স্বেচ্ছাশ্রমে প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য থাকে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ তাঁদের স্বেচ্ছাশ্রম কবুল করুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top