সকল মেনু

থার্টি ফার্স্ট নাইটে নাশকতা করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা তাদের

হটনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পেরেছে, থার্টি ফার্স্ট নাইটে নাশকতা করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি র‌্যাব-৩ এর নিজ কাযালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাব-৩ এর কয়েকটি আভিযানিক দল একযোগে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, মুগদা, ওয়ারী, খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতাররা হলেন- সুজন ফকির (২০), ইউসুফ ঘরামী (২৪), শুভ (২৬), সবুজ (২০), রাজু মোল্লা (৩৫), হাবিবুর রহমান (২০), মিলন (৩০), স্বপন (২৮), আল আমিন (২১), সিদ্দিকুর রহমান টুটুল ওরফে কালু (২৮), রফিক (৩৬), জাকির (৩০), রুবেল আলম (২৬), সজল (২৫), নুরা (২২), ইব্রাহীম খলিল (২৫), সেলিম রেজা (২৮), আজিম (২৪), মোজ্জাম্মেল হোসেন (২৬), মানিক হোসেন (২৫), শামীম আলী (৩০), ওমর আলী ওরফে মিলন (৪০), রনি (৩৩), রুবেল (৩২) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩৮)।

গ্রেফতারদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার, চাকু, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ বিপুলসংখ্যক দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর প্রধান বলেন, যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে এদের তৎপরতা বাড়ে। আসন্ন থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ তৈরি হলে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি কয়েক রাত ধরে ছিনতাইয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে। এছাড়াও থার্টি ফার্স্ট নাইটে নাশকতা তৈরির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা ছিল চক্রটির।

তিনি বলেন, সাধারণত লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের সামনে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আশপাশের এলাকায় এ ছিনতাই চক্রের সদস্যরা ঘুরাফেরা করতে থাকে। চক্রের অন্য সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে ওতপেতে থাকে। সুযোগ পেলেই পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের ধারাল অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

আরিফ মহিউদ্দিন জানান, ছিনতাই কাজে বাধা দিলে নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করে না তারা। রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক, হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউসিবিএল ক্রসিং, পল্টন মোড়, গোলাপ শাহ মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যেসব ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদের আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে এবং অনুসরণকৃত ব্যক্তির সঙ্গে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায় এবং সেখানে ছিনতাই চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন সদস্য ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে। লোকজন এগিয়ে এলে বলে- নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে।

‘এছাড়াও তারা ছিনতাই কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীকে টার্গেট করে তারা তখন অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে ওই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। সুবিধামতো স্থানে পৌঁছে ওই যাত্রী এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাইয়ের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহও করে। চক্রের সদস্যদের রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে কোনো বাসস্থান নেই। তারা সবাই রাজধানীর ভাসমান বাসিন্দা। চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে এ চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান চলমান রাখা এবং এসব ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top