সকল মেনু

আবার ওসমান পরিবারকে দায়ী করলেন ত্বকীর বাবা

Toki-0120131004171445 জেলা প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ, ৫ অক্টোবর:  মেধাবী ছাত্র নিহত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, ত্বকীকে কারা কিভাবে কখন হত্যা করেছে, তার প্রমাণ একটি গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। ত্বকীকে হত্যার ৫ দিন পর সাংসদ নাসিম ওসমান ও তার ছেলে আজমির ওসমানের  থোপকথনের একটি ভয়েস রেকর্ডও গোয়েন্দা সংস্থা সংগ্রহ করেছে। ওই রেকর্ডে ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তা উল্লেখ রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় ত্বকী হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে ত্বকীর বাবা এসব কথা বলেন। সমাবেশে রাব্বি বলেন, ত্বকীকে কোথায় কিভাবে কারা হত্যা করেছে তা আমরা জানতে পেরেছি। কার গাড়িতে করে ত্বকীকে অপহরণ করা হয় এবং হত্যাকা-ের পর কার গাড়িতে করে ত্বকীর লাশ কোথায় ফেলা হয়েছে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বিস্তারিত রয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনাটি যাতে ফাঁস হয় না সেজন্য নিজেদের মধ্যে শপথও করে খুনিরা। সমাবেশে রাব্বি জানান, ৮ মার্চ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৩ মার্চ বিকেলে ৪ টা ৪১ মিনিটে এমপি নাসিম ওসমান ( ০১৯৭৭৭৯৭৭৭৫ নাম্বার থেকে ) তার পুত্র আজমেরীর ওসমানের (০১৭৪০২২২২২২ নাম্বার থেকে) সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। সাড়ে ৫ মিনিটের কথোপকথনের এক পর্যায় নাসিম ওসমান আজমিরের কাছে জানতে চান ত্বকীকে কে হত্যা করেছে। উত্তরের আজমির জানায়, ছোটজন (অয়ন ওসমান)  এরপর নাসিম ওসমান বলেন, তুমিও সাথে আছো। ওপার থেকে কোন উত্তর আসেনা। নাসিম ওসমান বলেন, তোমার আশপাশ ক্লিয়ার করো। ধরা পড়লে কিন্তু আগেরগুলোও প্রকাশ পেয়ে যাবে। সাবধান। প্রকাশ পেলে কিন্তু আমাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। কোটি কোটি টাকা খরচ করছি। এখনও টাকা দিয়ে এলাম। জানতে চান, যে ছেলেটিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সে কে? উত্তরে আজমির জানায়, সে ছাত্র সমাজের ছেলে।ত্বকীর বাবা বলেন, নাসিম ওসমান ও তার ছেলে আজমিরের মধ্যকার কথপোকথন থেকে বোঝা যায় ত্বকীকে ওসমান পরিবারের সদস্যরাই হত্যা করেছে। অথচ এই টেলিকনভারসেশনটি ওই গোয়েন্দা সংস্থার কাছে র‌্যাব চাইলে দেই দিচ্ছি করে দেয়া হয়নি। পরে র‌্যাবকে জানানো হয়, এটি নষ্ট হয়ে গেছে। ত্বকীর বাবার অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে সার্ভার থেকে এটি মুছে ফেলা হয়েছে। তবে তাদের হত্যার প্রমাণ কোন না কোন জায়গায় তারা রেখে দিয়েছে। এজন্য আমরা দাবি জানাই আজমীর ওসমানকে গ্রেফতার করা হোক। আমরা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির কাছে অনুরোধ জানাই- এই খুনি পরিবারের কাউকে মনোয়ন দেবেন না। সমাবেশে ত্বকীর বাবা রাব্বি আরো অভিযোগ করেন, আজমীর ওসমানের টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যার পর খুনদেও শপথ করানো হয়। কেউ যদি ঘটনা ফাঁস করে তবে তার অবস্থাও ত্বকীর মতো হবে। তিনি বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর আমরা খবর পেলাম শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে ওসমান পরিবারের যারাই বিদেশে যেতে চায় তাদের যেন বিদেশে যেতে দেয়া হয়। আমরা ৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করলাম যেন তারা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে। অথচ ৭ সেপ্টেম্বর আজমীর ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলো। আজমীর, অয়ন-দুজনই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। রাফিউর রাব্বি সমাবেশে আহবান জানান, আগামী নির্বাচনে কোন দল যেন ওসমান পরিবারের কাউকে মনোনয়ন না দেয়। তার পরও কোন দল তাদের মনোনয়ন দিলে ওসমানের সঙ্গে সঙ্গে ওই রাজনৈতিক দলেরও ভরাডুবি হবে।সমাবেশে নাসিক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, সার্ভার থেকে এই টেলিকনভারসেশন তিন কোটি টাকার বিনিময়ে মুছে ফেলা হলেও এটি এমন এক জিনিস এটি কোন না কোন জায়গায় রয়েই গেছে। সময় মতো এটি বের হবে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হবার পর শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। এই অক্টোবর মাসেই (২০১১সালের ৩০ অক্টোবর) নাসিক নির্বাচনে শামীম ওসমানের পরাজয় হয়েছিল। আর চলতি অক্টোবরেই ত্বকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওসমানরা গ্রেফতার হবে। আইভী তার বক্তব্যে শামীম ওসমানকে আবারো নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকীর মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটিকর্পোরেশনের মেয়র আওয়ামীলীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সন্ত্রাস নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হালিম আজাদ, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দীন আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এডভোকেট এবি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আব্দর রহমান, জেলা বাসদ সমন্বয়ক নিখিল দাস, জেলা সিপিবি সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিমাংসু সাহা, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, জেলা সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ ঘোষ বাবু ও সাবেক সভাপতি ভবানী সংকর রায়, কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহম্মদ রেজা উজ্জল, অঞ্জন দাস, তরিকুল সুজন প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top