সকল মেনু

৬৮তম সাধারণ অধিবেশন উদ্বোধন করলেন বান কি মুন

moon-bg20130918132519  সজীব বিশ্বাস, হটনিউজ২৪বিডি.কম,নিউইয়র্ক: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের উদ্বোধনী বক্তৃতার মধ্য দিয়ে এই অধিবেশনের শুরু হয়। এতে বান কি মুন, সিরিয়ায় চলমান সঙ্কট নিরসন এবং সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে আরও বেগবান করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনেও গোটা বিশ্বের শত শত কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ, প্রত্যেকের জন্য একটি মর্যাদার জীবন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কাজ করবে। বান কি মুন বলেন, আমরা ২০১৫ সালের মধ্যে নির্ধারিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে করণীয় দিকগুলো নির্দেশ করবো। সময়সীমা শেষ হয়ে এসেছে। আমি আশা করি ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ ও জনহিতৈষীমূলক কমিউনিটিগুলো তাদের এমডিজি অর্জনের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে পারবেন। “তবে এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা, বিশেষ করে টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি একক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে আমরা গভীরভাবে কাজ করতে পারবো,” বলেন বান কি মুন। তিনি বলেন, আমরা আশা করি নতুন যুগে নতুন যেসব জটিল চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এসেছে তা মোকাবেলা করে, গোটা বিশ্বের মানুষ কি চায় তা বুঝে আমাদের কর্মসূচি নিতে পারবো। ‘২০১৫ পরবর্তী এজেন্ডার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত’ এই প্রতিপাদ্যে অধিবেশন আয়োজনের জন্য এবারের সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি জন অ্যাশকে ধন্যবাদ জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। এছাড়াও উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার জন্য ছয়টি থিমেটিক ইস্যু নির্ধারণ এবং বিতর্ক আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়াতেও ৬৮তম অধিবেশন সভাপতির প্রশংসা করেন তিনি। বান কি মুন বলেন, এই অধিবেশনে ২০১৪ সালের সম্মেলনে ছোট ছোট দ্বীপ উন্নয়ন রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা হবে। “গোটা বিশ্ব আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিভাবে আরও বিনিয়োগ বাড়বে ভবিষ্যত সম্মৃদ্ধি ও সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে তা তারা জানতে চায়,” বলেন বান কি মুন। প্রতিবন্দ্বীদের নিয়ে ও অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হবে জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এর বাইরেও আমরা শান্তি ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলোতে আলোকপাত করবো। তিনি বলেন, আমি জলবায়ূ পরিবর্তন ইস্যুতে উচ্চ পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃত্বদের নিয়ে একটি বৈঠক করতে চাই এবং আশা করি সবগুলো দেশ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে। বক্তব্যে সিরিয়া সঙ্কট প্রসঙ্গ টেনে বান কি মুন বলেন, নিঃসন্দেহে সিরিয়া এখন গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এই সম্মেলনের দায়িত্ব রয়েছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা এবং এই সমস্যার সমাধানে একটি কণ্ঠস্বর জাগ্রত করা। তিনি বলেন, সিরিয়ার মানুষকে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতেই এটা প্রয়োজন। এলক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এই অধিবেশনকালেই বসবে বলে জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। এছাড়াও জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বিশেষ বৈঠক করবে যেখানে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমঝোতা প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব জানান, সম্মেলনকালে ইয়েমেন ও মায়ানমারের ট্রানজিশনের সময়টিতে কিভাবে সহায়তা করা যায়, এবং মালির সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া যায় তা নিয়ে কথা হবে। এবারের অধিবেশনকালে মানবাধিকার বিষয়ক ভিয়েনা সম্মেলনের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ আয়োজন থাকবে বলেও জানান মহাসচিব। ওই সম্মেলনের ধারাবাহিকতায়ই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার গঠিত হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব এসময় আরও বলেন, এবারের সম্মেলনের অস্থায়ী ভেন্যুটি মূল ভবনের মতো সুন্দর ও গোছানো হবে না, মূল ভবনে সংস্কার কাজ চলছে। তবে ভেন্যুর সৌন্দর্য্যের চেয়ে বড় কথা আমরা সেখানে কি কাজটি করছি। গোটা বিশ্বের মানুষের অগ্রগতির পক্ষে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সেটাই সাফল্য হয়ে থাকবে। আর সেই চেতনা থেকেই আমি এই ৬৮তম গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের সভাপতি জন অ্যাশের যোগ্য নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। আর আমরা জানি ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য অধিবেশন সভাপতি জন অ্যাশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সাধারণ অধিবেশন কক্ষ সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকায় প্রত্যেকটি ডেলিগেশনের প্রতি বিশেষ করে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের প্রতি হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করছি আগামী বছরের মধ্যে মূল ভবনের কাজ সমাপ্ত হবে, এবং জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর নেতারা নতুনভাবে সজ্জিত ভবনটিতে তাদের সম্মেলন করতে পারবেন। সবশেষে তিনি জাতিসংঘের সামনে যেসব এজেন্ডা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে সকলের প্রতি একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা চান অধিবেশন সভাপতি জন অ্যাশও। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা নির্ধারণে এবারের অধিবেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে আমরা আমাদের নিজেদের প্রমাণিত করতে পারবো। এবং আমাদের সবারই এক্ষেত্রে সমান প্রচেষ্টা থাকবে। জন অ্যাশ আরও বলেন, আমি আশা করি সাধারণ অধিবেশন তার উচ্চাকাঙ্খিত এজেন্ডাগুলো যথাসময়ে ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। গোটা বিশ্ব থেকেই সহযোগিতার যে প্রতিশ্রুতি আমি পেয়েছি তাতে আমি উদ্বুদ্ধ। আশা করি এই প্রতিশ্রুতিগুলোই একটি সমন্বিত শক্তি হিসেবে এবারের অধিবেশনকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ করে তুলবে।

সাধারণ অধিবেশনের এই উদ্বোধনী দিনে আরও সিদ্ধান্ত হয় ৬৮তম অধিবেশনের ক্রেডেন্সিয়াল কমিটিতে থাকবে বেলজিয়াম, চীন, কলম্বিয়া, গ্যাবন, গায়ানা, রুশ ফেডারেশন, সিঙ্গাপুর, তানজানিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।  moon-bg20130918132519এছাড়াও এই দিন অ্যাসেম্বলি সদস্যরা এবারের অধিবেশনের জন্য বিভিন্ন ফোরাম ও কমিটির অনুমোদন দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top