সকল মেনু

রাজধানীতে বাথরুমের ফলস ছাদে রহস্যজনক কঙ্কাল, চাঞ্চল্য

হটনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা হানিফ সরকারের দিনটা খুব সাদামাটাভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেদিন বিকেলে পিলে চমকে ওঠার মতো এমন এক তথ্য তিনি পেলেন যা কোনদিন কল্পনাও করেননি। বাড়িতে একটা কঙ্কাল পাওয়া গেছে!

দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে পানির লাইন মেরামতের জন্য যে মিস্ত্রি কাজ করেন ফোনকলটি ছিল তার।

“ফোনে মিস্ত্রি আমাকে জানালো স্যার একটু নিচতলায় আসেন। সে আমাকে ফোনে কথাটা বলতে চায়নি। নিচে যাওয়ার পর যখন সে আমাকে বলল যে স্যার বাথরুমের ফলস ছাদের উপর মনে হয় একটা লাশ পাইছি। আমি বললাম ব্যাটা কি কস, পাগলের কথা।”
কিন্তু তার কথাই সত্য হল। তবে পলিথিন, সিমেন্ট আর কংক্রিট দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় যা পাওয়া গেল তা একটি মানুষের কঙ্কাল।

যার বিভিন্ন অংশ টুকরো হয়ে গেছে অথবা খুলে আলাদা হয়ে গেছে। সিনেমায় এমন দৃশ্য নানা সময় দেখা যায়। পুরনো বাড়ি থেকে বের হয় মরদেহ, কঙ্কাল অথবা মূল্যবান কোন বস্তু।

হানিফ বলেন, “আমার কপালে কঙ্কালটাই জুটল।”

সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার নিচতলার ভাড়াটিয়া জানালেন যে বাথরুমে পানি আসছে না।

“আমি আমার পার্মানেন্ট মিস্ত্রিকে বললাম বিষয়টা দেখতে। সে কয়েকদিন পরে সেখানে গেল। খুঁজে কোনও সমস্যা না পেয়ে সে বাথরুমের উপরে ফলস ছাদে ওঠে। সেখানে পাইপ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেয়াল ভাঙতে হয়েছে। সেই সময় বের হয়ে এল প্লাস্টিকে মোড়ানো কিছু একটা।”

হানিফ সরকার জানালেন তিনি থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন।

ঘটনার দিন পুলিশের প্রায় সবগুলো বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা সারারাত জুড়ে তার বাড়িতে এসেছে।

পুলিশের উপস্থিতির পর যখন প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানলেন তখন তারাও ভিড় করতে লাগলেন হানিফ সরকারের বাড়িতে।

কঙ্কাল নিয়ে রহস্য
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, তার কর্মজীবনে এযাবতকালে এমন রহস্যজনক অভিজ্ঞতা তার হয়নি।

তিনি বলেন, “লাশ সংরক্ষণ করার জন্য চা পাতা ব্যবহার করা হয়েছে। তারপর পলিথিন দিয়ে সেটি মোড়ানো হয়েছে এবং সিমেন্ট, বালু, সুরকি দিয়ে সেটিকে চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে।”

“আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে কাজটি করেছে সে এই বিষয়ে বেশ দক্ষ,” যোগ করেন তিনি।

এই কঙ্কালটি নারী না পুরুষের, বয়স কত, কতদিন আগে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে, অথবা মৃত্যু হয়েছে সেসব কিছুই এখনও জানা যায়নি। মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, কঙ্কালটি ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই পরীক্ষা না করে বিস্তারিত জানা যাবে না।

হানিফ সরকার জানিয়েছেন বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ১৯৯০ সালে। এর তিনবছর পর তিনিই নিচতলার প্রথম বাসিন্দা।

বাড়ির উপরের অংশ তৈরি হয়ে গেলে তিনি উপরে উঠে যান। এরপর থেকে সেখানে মোট চারজন ভাড়াটিয়া উঠেছে।

একজন ভাড়াটিয়া দীর্ঘদিন ছিলেন। তার পরিবার চলে যাওয়ার পর একবার ফ্ল্যাটটিতে সংস্কার কাজও করা হয়েছে।

পুলিশ এখন ভাড়াটিয়াদের খোঁজ করে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

কঙ্কালটির ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সেটি ভাড়াটিয়াদের পরিবার, কর্মচারী ও বাড়িওয়ালার পরিবার সবার সাথে মিলিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কঙ্কাল উদ্ধারের পর পুলিশ নিজে একটি হত্যা মামলা করেছে।

তবে এত দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে ভাড়াটিয়া, কর্মচারী, অতিথিসহ কত ধরনের মানুষ সেখানে এসেছেন। তাই এর তদন্ত বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার পিলে চমকে ওঠা অভিজ্ঞতা

ছয়জনের পরিবার নিয়ে শ্যামল খান নিচতলায় ভাড়া উঠেছিলেন গত বছরের জানুয়ারি মাসে।

দুটি ঘর, একটা বাথরুমের ফ্ল্যাটটি নিচতলায় হওয়াতে এমনিতেই বেশ অন্ধকার।

তিনি বলেন, “মাথার উপরে কঙ্কাল নিয়ে এতদিন আমি, আমার বাচ্চা ও পরিবার বাথরুম ব্যবহার করছি। এখানে রাতে ঘুমাইছি ভাবলে গা ছমছম করে ওঠে।”

শ্যামল খান বলছেন, এই ভয় তিনি ও তার পরিবার এখনও কাটাতে পারছেন না। কিন্তু ভয় নিয়েই অন্ধকার ফ্ল্যাটটিতে থাকতে হচ্ছে কারণ তদন্তের স্বার্থে বাড়িটি ছেড়ে তারা যেতে পারছেন না।

অন্যদিকে বাড়ির মালিক হানিফ সরকার বলছেন, “আমার বাড়িতে একটা কঙ্কাল থাকতে পারে, আমার তো মাথায় ধরতেছে না বিষয়টা। জীবনে এরকম অভিজ্ঞতা হবে তাও ভাবিনি।”

কঙ্কালের অবস্থা যা বলে
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, “নানা কারণে কঙ্কাল ক্ষয় হতে পারে। তার একটি হল সময়। অনেকদিনের পুরনো হলে সেটি ক্ষয় হবে। এছাড়া আগুনে পুড়ে অথবা অ্যাসিডে মৃত্যু হলেও কঙ্কাল দ্রুত ক্ষয় হয়। আবহাওয়াও একটা ফ্যাক্টর। কঙ্কাল পরীক্ষা না করে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।”

তিনি বলছেন, কঙ্কাল পরীক্ষা করে জানা যায় কতদিন আগে মানুষটির মৃত্যু হয়েছে। একদম হুবহু না হলেও কাছাকাছি অনেক তথ্য বের করা সম্ভব।

তিনি আরও বলছেন, সাধারণত একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির মরদেহ কঙ্কাল হতে মাস তিনেক সময় লাগে। তবে সেটিও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বেশি থাকলে প্রক্রিয়াটি তাড়াতাড়ি ঘটে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top