সকল মেনু

ঐশীর চাঞ্চল্যকর তথ্য

aishi20130819005918 নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা, ১৯ আগস্ট: পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক নিহত মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তাঁদেরই মেয়ে ঐশী রহমানকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে ঐশী।

সে জানায় তার বাবা মাহফুজুর রহমান ছিলেন ব্যাকডেটেড (সেঁকেলে)। বাবার সাথে কখনোই একমত হতে পারত না সে। আর মা খুব বকাঝকা করতেন। সারাক্ষন তার ভুল ধরতেন। বাবা বাসায় এলে তার কাছে নালিশ করতেন। এ জন্য মায়ের উপর রাগ ছিল ঐশীর।

এসব ক্ষোভ থেকেই বাবা-মাকে হত্যা করেছে কি না—পুলিশ কর্মকর্তাদের এ প্রশ্নের জবাবে ঐশী বলে,‘আমি বাবা-মাকে খুন করিনি। আমার বন্ধু জনি ও জনির এক পরিচিত তাদের খুন করেছে। আমি শুধু কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলাম।’
ঐশী খুনের দায় স্বীকার না করলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন এ হত্যাকাণ্ডে ঐশী ও তার বন্ধুরা জড়িত। আর লাশ দুটি বাথরুমে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন ওরফে সুমি।
রাজধানীর মিন্টো রোডে পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে রোববার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ হত্যার সঙ্গে ঐশীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর সঙ্গে জড়িত আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা দু`জন ঐশীর বন্ধু।
মনিরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেছে, সে শুধু কফিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে তা খাইয়ে বাবা-মাকে অচেতন করেছে। হত্যা করেছে তার বন্ধু জনি ও জনির পরিচিত একজন।
ঐশীর দাবি, বুধবার রাতে গাড়ি নিয়ে জনিসহ দুজন তাদের বাসায় আসে। এরপর তাদের বাসায় লুকিয়ে রাখা হয়। মা-বাবা অচেতন হওয়ার পর তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়।
মনিরুল বলেন, ঐশীর বাবার শরীরে দুটি ও মায়ের শরীরে ১১টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। এতে মনে হচ্ছে, মায়ের প্রতি তার ক্ষোভ ছিল বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাহফুজ বদলি হয়ে আসার পর ঐশীকে ঢাকার একটি স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেখানে ফল খারাপ করায় তাকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করা হয়।
চলতি বছর সে ওই স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেলের দুই পার্টের পরীক্ষা শেষ করেছে। কিন্তু এরপর সে অমনোযোগী হয়ে ওঠে, পড়াশোনা ঠিকমতো করত না। এ নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে তার রাগারাগি শুরু হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঐশীর পরিচিত দুই তরুণ ইয়াবার খুচরা বিক্রেতা। উঠতি তরুণ-তরুণীদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করত তারা। এরা আবার একটি নাচের দলের সদস্য। দেড় বছর আগে একটি নাচের অনুষ্ঠানেই পরিচয় হয় ঐশীর সঙ্গে।
আটক গৃহকর্মী সুমি পুলিশকে বলেছে, ঐশীকে সে প্রায় সময় ট্যাবলেট খেতে দেখেছে। প্রায়ই সকালেই বাসা থেকে বের হয়ে যেত সে। কখনো গভীর রাতে ফিরত। এতে বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এর পর থেকে ঐশীর চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করেন মা-বাবা। অনুমতি ছাড়া যেন সে বাইরে বের হতে না পারে, সে জন্য বাসার নিরাপত্তাকর্মীদের বলে দেন তাঁর বাবা।
গত বুধবার সকালে ঐশী তার মাকে জানায়, সে ভালো হয়ে গেছে, আর অবাধ্য হবে না। মা বিষয়টি তার বাবাকে জানান। বাবা খুশি হয়ে সকালেই তাকে নিয়ে রমনা পার্কে হাঁটতে যান।
এভাবে বিশ্বাস স্থাপনের পর ঐশী বুধবার বিকেলে মাকে বাইরে যাওয়ার কথা জানায়। মা তাকে যেতে অনুমতি দেন। এ সুযোগে বাসা থেকে বের হয়েই ঐশী বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে, আবার বিকেলে ফিরে আসে। পুলিশের ধারণা, এ সময় খুনের পরিকল্পনা করা হয়।
গৃহকর্মী সুমি জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেছে, ঐশী এর আগেও একবার কফির সঙ্গে বাবা-মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিল। তবে ঐশী পুলিশকে বলেছে, মেরে ফেলার জন্য সে এটা করেনি।
ঐশীর আত্মসমর্পণের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কোথাও নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে ঐশী আত্মসমর্পণ করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে গৃহকর্মী ও ছোট ভাই ঐহীকে নিয়ে সে বাসা থেকে বের হয়ে বিকেল পর্যন্ত অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ জন্য অটোরিকশার চালককে দেড় হাজার টাকা দেওয়া হয়।
বিকেলে অটোরিকশার চালক নির্দিষ্ট করে জানতে চান, তারা কোথায় যাবে। জবাবে ঐশী বিপদে পড়ার কথা জানায়। এরপর চালক তাদের আশ্রয় দেন। ঐশীসহ তিনজনই ওই রাতে মুগদায় ওই চালকের বাসায় ছিল।

পরদিন সকালে চালকের বাসা থেকে বের হয়ে আসে ঐশী। এরপর ছোট ভাইকে কাকরাইল থেকে একটি রিকশাযোগে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। ঐশী চলে যায় বাড্ডায় বন্ধুর বাসায়।
শনিবার সকালে ঐশী উত্তরায় তার খালুর বাসায় যায়। কিন্তু ওই বাসা তালাবদ্ধ ছিল। বাসার নিচে হকারদের দিয়ে যাওয়া পত্রিকায় সে দেখে, তার মা-বাবার খুনের ঘটনা ছাপা হয়েছে। তখনই সে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়।
শনিবার বেলা দুইটার দিকে উত্তরা থেকে পল্টন থানায় ধরা দেয় ঐশী।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মা-বাবাকে হত্যার আগে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঐশী। তাই তার পড়ার খাতার ১২ পৃষ্ঠা জুড়ে লিখেছিল সুইসাইডাল নোট! খাতাটি এখন গোয়েন্দার হাতে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন থানার চামেলীবাগের ভাড়া ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে বাথরুম থেকে মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ মামলায় ঐশী, গৃহকর্মী খাদিজা ও ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান ওরফে রনিকে গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ঐশীর আরেক বন্ধু পারভেজকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
নিহত মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে গতকাল রোববার ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top