সকল মেনু

সিরিজ বোমা হামলার ১৩ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: গত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জানান দেওয়া জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি নতুন করে আবারও সক্রিয়া হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছর ধরেই তারা টার্গেটেড কিলিং (লক্ষ্য স্থির করে হত্যা) এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো কাজ করে আসছে। সংগঠনকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টায় তারা জামআতুল মুজাহিদীন অব ইন্ডিয়া—জেএমআই গঠন করেছে। এমনকি অনলাইনে কেন্দ্রীয়ভাবে দায় স্বীকার বা প্রপাগান্ডা চালাতেও দেখা যাচ্ছে জেএমবিকে; এ কাজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সালাউদ্দিন সালেহীন, যে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই সহযোগীসহ প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। যদিও প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়া সালেহীনের দুই সহযোগীর একজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে ভারতীয় পুলিশ। তবে এখনও অধরা রয়েছে সালেহীন।
এ অবস্থায় নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠা জেএমবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ, আর কেনই বা দেড় যুগ ধরে চালিয়ে আসা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার ১৩ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা— যারা দীর্ঘদিন প্রতিরোধের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণাও করছেন— তাদের ভাষ্য, জেএমবি এখন আর আগের মতো পুনরায় সংগঠিত হতে পারবে না। আগের মতো তাদের হামলার সামর্থ্যও নেই। তাদের অর্থের যোগান কমে গেছে, এক্সপ্লোসিভের যোগান কমে গেছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা স্থির হয়ে থাকতে পারছে না কোথাও। পালিয়ে গিয়ে ভারতেও আস্তানা গাঁড়তে পারছে না। সম্প্রতি বোমা মিজান নামে জেএমবির শীর্ষ এক নেতা ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
তবে অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর মতো জেএমবিও এখনও তাদের সদস্য সংগ্রহ করে যাচ্ছে। র‌্যাডিক্যালাইজেশন পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। কেউ ধরা পড়ার পর দ্রুতই সেই শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এটাই এখন একমাত্র থ্রেট বা হুমকি। এটি বন্ধ করা না গেলে সামনের দিনগুলোতে জঙ্গিবাদ নিয়ে আবারও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এমনটাই বলছেন জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার কাজ নয়, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে সমাজে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা, জঙ্গিবাদের বিপরীত আদর্শের লড়াই এবং বাংলা সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আইকনিক ক্যারেক্টার, লিবারেশন ওয়ারের স্পিরিটি— এসব বিষয় নতুন জেনারেশনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করা জেএমবি ২০০১ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বোমা হামলা, ডাকাতি-ছিনতাইয়ে সক্রিয় ছিল তারা। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দেয়। যদিও এরপর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সংগঠনটির প্রায় শীর্ষ নেতাকে আইনের আওতায় আনা হয়। বিচার শেষে বেশ কয়েকজনের ফাঁসির দণ্ডও কার্যকর করা হয়।
পুলিশ সদর দফতরের এক হিসাব বলছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ ১৪৯টি মামলায় ১ হাজার ১০৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। ১০টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯৩ মামলার রায়ে ২৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি মোট ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে আটজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
২০১০ সালের পর নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের পর জেএমবি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে একটি অংশ আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘নব্য জেএমবি’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরের বছর থেকে তারা সারাদেশে টার্গেটেড কিলিং শুরু করে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতেও হামলা চালিয়েছিল এই নব্য জেএমবি।
এদিকে মাঝে দীর্ঘ সময় বিরতির পর ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর পুরানো ঢাকায় একসঙ্গে ছয়জনকে হত্যার মাধ্যমে পুনরায় টার্গেটেড কিলিংয়ে শুরু করে পুরনো জেএমবি। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া, ওই বছরের ২৭ আগস্ট ঢাকার রাজাবাজারে মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা, ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর বাড্ডায় কথিত পীর খিজির হায়াতকে হত্যা, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল কাশিমপুরে সদ্য অবসরে যাওয়া কারা কর্মকর্তা রুস্তম হাওলাদারকে হত্যা, ৭ মে রাজশাহীতে কথিত পীর শহীদুল্লাহকে হত্যার পাশাপাশি নিয়মিত ডাকাতি-ছিনতাই করে আসছে পুরনো জেএমবি।
সম্প্রতি পুরনো জেএমবিকে নতুন করে আরও বেশি সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ১১ জুন সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজাদিখানে লেখক ও প্রকাশক শাজাহান বাচ্চুকে হত্যার কয়েকদিন পর নিজস্ব প্রপাগান্ডা চ্যানেলে এই হত্যার দায়ও স্বীকার করেছে জেএমবি।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুরাতন জেএমবি কখনও সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল না। তারা কম হোক বেশি হোক নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ছিল ইন্ডিয়াতে। বাংলাদেশে যখন নতুন একজন, তামিম চৌধুরীর মাধ্যমে জেএমবির একটি অংশ সক্রিয় হয়, তখন পুরাতন জেএমবির অনেকেই নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল। এই সময়টাতে পুলিশি তৎপরতা বা গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে নিউ জেএমবি কোণঠাসা হলেও ওল্ড জেএমবির ওপর নজর কিছুটা কম ছিল। ইনভলবমেন্ট কম থাকার কারণে গ্রেফতারও কম হয়েছে। এই ভ্যাকান্ট টাইমে তারা কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করেছিল।’
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি প্রতিরোধে কাজ করে আসা ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘জেএমবির এই উত্থান ছিল পাশ্ববর্তী দেশকেন্দ্রীক। কিন্তু ইন্ডিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটিভ ছিল। আমাদের সাথে তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল, তথ্য আদান-প্রাদান হয়েছে। এ কারণে তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। এমনকি শীর্ষ জঙ্গি বোমা মিজানকেও তারা গ্রেফতার করেছে। পুরানো জেএমবি সক্রিয় রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা এমন না যে, নিউ জেএমবি যেভাবে কান্ট্রি ওয়াইড ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়েছিল, সেই মাত্রার কার্যক্রম তারা চালাতে পারবে। তাদের সেই শক্তি এখন নেই।’
‘তবে হ্যাঁ, জঙ্গি সংগঠনগুলোতে নেতৃত্ব একটা বড় বিষয়। পুরাতন জেএমবির সালেহীন যেহেতু এখনও বাইরে আছে, সে একজন ক্যারিশমাটিক লিডার। যদি এমন ক্যারিশমাটিক লিডার একজনও বাইরে থাকে তাহলে সেটা কিছুটা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এজন্য সালেহীনকে ধরতে পারাটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ’, বলছিলেন ছানোয়ার হোসেন।
পুরনো জেএমবি কতটা সক্রিয় হয়ে উঠেছে আবার আর কীভাবে জেএমবি তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে?

পুরনো জেএমবি যে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে তারা ভারতেও নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ভারতে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে খানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি গত জানুয়ারিতে বুদ্ধগয়ায় দালাইলামাকে হত্যার পরিক্ল্পানা করেছিল তারা। অথচ আগে ভারতে আত্মগোপনে থেকে কেবল বাংলাদেশকেই টার্গেট করে আসছিল জেএমবির সদস্যরা। সংগঠনকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার জায়গা থেকে তারা এখন ভারতেও হামলার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে ভারতীয় মুসলিমদেরও ভুল বুঝিয়ে দলে টানার চেষ্টা করছে।

দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি বলছেন, ‘আমরা বিগত দিনেও দেখেছি যে, ২০০৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিরা নিষ্ক্রিয় থেকেছে, আবার তারা সংগঠিত হয়েছে। এখন হলি আর্টিজানের পরে আমরা কিছুটা ভাটা দেখছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা সংগঠিত হচ্ছে না বা তাদের কোনও তৎপরতা নেই। কারণ, মাঝে মাঝেই নব্য জেএমবির নামেই হোক আর যে নামেই হোক তারা ধরা পড়ছে, বিস্ফোরক উদ্ধার করা হচ্ছে। সম্প্রতি পাশ্ববর্তী দেশ থেকে বোমা মিজান গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু সালেহীন এখনও বাইরে। আবার শুধু বোমা মিজান বা সালেহীন মূল বিষয় না। কেউ একজন গ্রেফতার হলে সেই গ্যাপ তো পূরণ হয়ে যায়। কারণ, সমাজে যখন অস্থিরতা থাকে, বিশ্ব পরিস্থিতি এবং দেশের পরিস্থিতি মিলিয়ে যখন একটা ডিমান্ড থাকে, তখন কিন্তু এই জায়গাগুলো খালি থাকে না।’
কীভাবে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে, পুরনো জেএমবি কীভাবে নতুন সদস্য সংগ্রহ করছে?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি সংগঠন চালাতে হলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। পুরানো জেএমবি সেই চেষ্টাটাই এখনও করে যাচ্ছে। গত এক বছরে সারাদেশে বেশ কয়েকটি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জেএমবি সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারও করা হয়েছে অনেককে। গ্রেফতার হওয়া অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী ডাকাতি-ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এখনও মাদ্রাসা পড়ুয়া বা দরিদ্র পরিবারের অনেককেই ভুল বুঝিয়ে সংগঠনের সদস্য বানানো হচ্ছে। এমনকি পুরানো জেএমবিতেও এখন উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারের তরুণদের যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান বলছেন, ‘গত আড়াই বছরে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, স্পেশ্যালি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অ্যাকশনের কারণে নিউ জেএমবি একেবারেই শেষ পর্যায়ে। ওল্ড জেএমবিও অনেকদিন ইনঅ্যাকটিভ ছিল। ওল্ড জেএমবির কিছু সদস্য নতুন করে অর্গানাইজ হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে তারা অর্থের জন্য ডাকাতি, ছিনতাই শুরু করে। আশার কথা হলো এই গ্রুপের যারা, তাদের অনেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজন শীর্ষ নেতা বোমা মিজান, সেও ইন্ডিয়াতে ধরা পড়েছে। তাদের শক্তি একেবারেই শেষের দিকে। সহিংস কোনও কার্যক্রম চালানোর জন্য তাদের কোনও শক্তি এই মুহূর্তে নেই।’
কিন্তু এই যে বছরের পর বছর ধরে জঙ্গিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তবু কেন জঙ্গিবাদ নির্মূল বা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির কারণে এই ধরনের ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠীকে প্রতিহত করার জন্য যে আদর্শিক লড়াই দরকার সেই আদর্শিক লড়াই বিশ্বব্যাপী অনুপস্থিত। অর্থাৎ ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর যে আদর্শ, সেটার বিপরীতে আরও উন্নত আদর্শের যে সংগ্রাম থাকার কথা, সেটা অনুপস্থিত। বিশ্বব্যাপী ন্যায্যতার অনুপস্থিতি, দুর্নীতি এবং প্রতিটি দেশে একধরনের বল প্রয়োগের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র শাসনের যে চেষ্টা, সেই জায়গাটিতে আসলে নতুন করে ভাবতে হবে। আসলে আদর্শিক সংগ্রাম যতক্ষণ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকবে সমাজে, ততক্ষণ পর্যন্ত সমাজে বা দেশে দেশে এ ধরনের গোষ্ঠীর অপতৎপরতা চলতে থাকবে।’
নূর খান বলেন, ‘শুধুমাত্র পুলিশি অভিযান বা সামরিক অভিযান দিয়ে এই ধরনের গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করা যাবে না, বরং তা বুমেরাং হবে। কারণ হলো দেশে কাউন্টার ন্যারেটিভ প্রচারের কোনও কার্যক্রম নেই। এদিকে গণতান্ত্রিক শাসন সংকুচিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি কিছু মানুষকে এক্সট্রিম চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রমাণ করে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। শুধু মাত্র আইনশৃঙ্খলার মাধ্যমে, আদর্শের লড়াই ব্যতিরেকে যারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা ভ্রান্ত নীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।’
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের পাশাপাশি গবেষণার সঙ্গে যুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এটা ঠিক, র‌্যাডিক্যালাইজেশন কিন্তু বন্ধ নেই; এটি অব্যাহত আছে। এটা একধরনের থ্রেট। র‌্যাডিক্যালাইজেশন সাধারণত জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার জন্য ভালনারেবিলিটি ক্রিয়েট করে। আমাদের দেশে র‌্যাডিক্যালাইজেশন বন্ধ করার জন্য আমাদের বাংলা সংস্কৃতি, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমাদের আইকনিক ক্যারেক্টার, আমাদের লিবারেশন ওয়ারের স্পিরিটি, এসব বিষয় যদি নতুন জেনারেশনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া না যায় তাহলে র‌্যাডিক্যালাইজেশন বন্ধ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘র‌্যাডিকালাইজেশন বন্ধের জন্য সবচেয়ে বড় এন্ট্রি ডোর বা রুট হলো আমাদের বাংলা সংস্কৃতি, স্পিরিট অব লিবারেশন ওয়ার। র‌্যাডিক্যালাইজেশন বন্ধ হওয়া মানেই হলো সন্ত্রাসী সংগঠন বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নতুন করে সদস্য রিক্রুট করতে পারবে না। সংগঠন চূড়ান্তভাবে শেষ করতে হলে র‌্যাডিক্যালাইজেশন বন্ধ করতে হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top