সকল মেনু

নির্বাচনি বছরে দিল্লিতে কেন এরশাদ

দিল্লি প্রতিনিধি: দিল্লি সফরে এসে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়সহ বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে গতকাল রবিবার (২২ জুলাই) দুপুরে দিল্লিতে এসে পৌঁছান এরশাদ।এর আগে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির অনেক নেতাই দিল্লি ঘুরে গেছেন। অনেকটা সেই ধারাবাহিকতায়ই নির্বাচনের বছরে জাতীয় পার্টির নেতারাও ভারতের রাজধানীতে পা রাখলেন।তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নেতাদের সফরের সঙ্গে এরশাদের সফরের একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। আওয়ামী লীগ নেতারা গত এপ্রিলে দিল্লিতে এসেছিলেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আমন্ত্রণে। আর গত মাসের গোড়ায় বিএনপির তিন নেতা অনেকটা নিজেদের গরজেই দিল্লিতে এসে ভারতের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে দেখা করেন।সেই জায়গায় এরশাদের দিল্লি সফর কিন্তু পুরোপুরি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে। গত সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা নিজে এরশাদের বাসভবনে গিয়ে তার হাতে ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন।দিল্লিতে এরশাদসহ জাতীয় পার্টির অন্য নেতারা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় যে পাঁচ তারকা তাজ মানসিং হোটেলে উঠেছেন, সেটাও ভারত সরকারের আতিথ্যেই।
দিল্লিতে পা রাখার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার রাতে এরশাদকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। দিল্লিতে রাজনাথ সিংয়ের সরকারি বাসভবনে (১৭ আকবর রোড) ওই নৈশভোজের অবকাশেই দুজনের মধ্যে বৈঠক হয়।আজ সোমবার বিকেলে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ আলোচনায় বসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। সাউথ ব্লকে সুষমা স্বরাজের দফতরে ওই বৈঠক চলে প্রায় ৪০ মিনিট। আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা ফিরে যাওয়ার আগে এরশাদ ভারতের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেও সূচি স্থির আছে। ভারতের বাংলাভাষী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গেও তার দেখা করার কথা।কিন্তু বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের যখন মাত্র কয়েক মাস বাকি, তখন ভারতের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে ঠিক কী নিয়ে কথাবার্তা বলছেন এরশাদ?
ভারত সরকারের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্ত বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি হয়তো প্রধান দুটো দলের মধ্যে আসে না, কিন্তু তাদের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে বরাবরই। বিশেষত বিগত নির্বাচনে বিএনপি না আসায় জাতীয় পার্টি একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। আগামী নির্বাচনের আগে তারা সে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কীভাবে বিশ্লেষণ করছে, আমরা সেটা জাতীয় পার্টির মুখ থেকেই শুনতে চাই।’এখানে উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফরে গিয়ে আরও অনেকের সঙ্গে রওশন এরশাদসহ জাতীয় পার্টি নেতৃত্বের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন।তখন নানা মহল থেকেই অভিযোগ উঠেছিল, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে এনে নির্বাচনকে একটা বৈধতা বা গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া যায়, ভারত সরকার সে লক্ষ্যেই প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। এ বছর নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত অবশ্য বেশ আলাদা। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা, তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকলেও জাতীয় পার্টির যোগদান নিয়ে অবশ্য বিশেষ সন্দেহ নেই।‘তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে জাতীয় পার্টির যে অবদান, তাকে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ কীভাবে মূল্যায়ন করছে বা করবে— সেটা নিশ্চয় এরশাদ সাহেব দিল্লির নেতৃত্বের কাছে জানতে চাইবেন’, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেছে জাতীয় পার্টির একটি সূত্র।জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যে প্রতিনিধিদল দিল্লিতে এসেছে তাদের মধ্যে আরও আছেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সুনীল শুভ রায় এবং মেজর (অব.) খালেদ আখতার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top