সকল মেনু

রাজনীতিকদের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ শুনানি: ভোগান্তিতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা

রাকিবুল ইসলাম রাকিব,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলায় আদালতে পক্ষে-বিপক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে শুনানি হতে দেখা যায়। গুরুত্বভেদে এসব মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য মামলার শুনানি শুরুর সুযোগ পায় না আদালত। ফলে কোর্টের তালিকায় থাকা অন্যান্য বিচারপ্রার্থীদের মামলার শুনানি পিছিয়ে পড়ে। এতে একদিকে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে মামলা নিয়ে ভোগান্তি বাড়ে, অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের মামলা নিষ্পত্তিতেও বিলম্বের সৃষ্টি হয়।

রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলার দীর্ঘ শুনানিতে সৃষ্ট সাধারণ বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ভোগান্তি লাঘবে গত ১৯ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট দায়ের করেন। বর্তমানে আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগে অপেক্ষমাণ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলার শুনানি দিনভর এবং দিনের পর দিন চলতে থাকে। অথচ সেখানে অন্যান্য মামলার শুনানি চার/পাঁচ মিনিটে শেষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে অপেক্ষমাণ লাখ লাখ মামলার (প্রায় ৫ লাখ) নিষ্পত্তিতে বাধার সৃষ্টি হয়।তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলার শুনানি থাকার কারণে কোর্টের বিভিন্ন গেট দিয়ে আইনজীবী, ক্লার্ক ও মক্কেলদের পুলিশ ভেতরে ঢুকতে দেয় না। আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর কিছু আইনজীবীকে ঢুকতে দিলেও পুলিশের দ্বারা তাদের অযথা হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই এসব অবস্থা থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়াসহ অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলা সুপ্রিম কোর্টের বাইরে অন্য কোথাও শুনানি চেয়ে রিট দায়ের করি।

ওই রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ১৬ কোটি মানুষের জন্য সুপ্রিম কোর্ট। এখানে ফরিয়াদি পক্ষ আসবে, জনগণ আসবে। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে আইনজীবীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেন না। তাই রাজনৈতিক মামলা নিস্পত্তি ও শুনানির জন্য প্রয়োজনে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এসব মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের বাইরে অন্যত্র সার্কিট বেঞ্চ গঠন করা হোক।

তবে বিষয়টি সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলা অন্যত্র শুনানির জন্য সার্কিট বেঞ্চ গঠন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের বেঞ্চ গঠন করলে বিচার বিভাগে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলা শুনানির জন্য সার্কিট বেঞ্চ গঠন করা হলে তা হবে বিচারের নামে প্রহসন। এটা সংবিধান সম্মত হবে না। যেহেতু আদালতই (বিচারক) নির্ধারণ করেন কোন মামলায় কত সময় শুনানি হবে, তাই এ ধরনের বেঞ্চ (সার্কিট বেঞ্চ) গঠনের কোনও প্রয়োজন আমি দেখছি না।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলার শুনানিতে দীর্ঘসূত্রিতা হলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের সুযোগ রয়েছে বিষয়টি আদালতের নজরে আনার। অনেকাংশে আইনজীবীরা যদি শুনানি করতে চান তাহলে আদালত তাদের শুনানি বন্ধ করতে বলতে পারেন না। তবে আদালত চাইলে শুনানির জন্য আইনজীবীদের সময় বেঁধে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আইনজীবীরা একটি মামলায় কতক্ষণ শুনানি করবেন সেটা তার সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।

কিন্তু রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দের যুক্তি হলো, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটির বিচার হওয়ার কথা ছিল জজ কোর্টে। কিন্তু বকশীবাজারে বিশেষ আদালত স্থাপনের পর সেখানেই মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়। অন্যান্য মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে, এই আশঙ্কায় মামলাটি (জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলা) জজ কোর্টে শুনানি হয়নি। তাই খালেদা জিয়ার মামলাসহ সব রাজনীতিকদের মামলা অন্য আদালতে শুনানির জন্য রিট করি। সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের যে কোনও জায়গায় সার্কিট বেঞ্চ করতে পারেন। তাই অন্যত্র বেঞ্চ গঠন করে সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মামলা শুনানি করলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে সাধারণ বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের ভোন্তি লাঘবও সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top