সকল মেনু

অাবারো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, সমর্থকদের উচ্ছ্বাস

অান্তর্জাতিক ডেস্ক: আবারো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। ২৪ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল আতাতুর্কের দল সিএইচপি’র প্রার্থী মুহাররেম ইনজে এ পর্যন্ত পেয়েছেন ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট। এখন পর্যন্ত মোট ৯৯ দশমিক ১১ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে।

রজব তাইয়্যেব এরদোয়াননির্বাচনে জয়ের সাংবাদিকদের এরদোয়ান বলেন, ‘শাসক নয়, বরং সবসময় জনগণের সেবক হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার জনগণ এ ব্যাপারে সজাগ। ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের ভালোবাসার জানান দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে তুরস্ক দুনিয়াকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে। এ নির্বাচনে তুরস্কের জনগণ, এ অঞ্চল এবং দুনিয়ার সব নিপীড়িত মানুষের বিজয় অর্জিত হয়েছে।এদিকে এরদোয়ানের বিজয়ের খবরে রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার সমর্থকরা। দেশ-বিদেশ থেকে আসতে শুরু করে একের পর এক অভিনন্দন বার্তা। এরইমধ্যে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, তার্কিশ রিপাবলিক অব নর্দার্ন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা আকিঞ্চি, বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসোভ প্রমুখ।

এদিন একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পার্লামেন্ট নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছে এরদোয়ানের জোট। সিএইচপি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ৩৪ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট।

৬০০ আসনের পার্লামেন্টে এরদোয়ানের দল একেপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৩ জন এমপি। জোট শরিক এমএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৫০ জন। কামাল আতাতুর্কের দল সিএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৬ জন এমপি। তাদের জোট শরিক ইয়ি পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪ জন।

২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। ২০১৪ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। তার প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল এবং ধার্মিক অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তুর্কিরা। তিনি তুরস্কের এতকাল ধরে চলে আসা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধকে শক্তিশালী করেছেন এবং তার সময়ে দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামোতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

নিজের অনুসারীদের স্বপ্ন দেখাতে আর তুরস্কের অতীত ঐতিহ্য মনে করিয়ে দিতে ভালোবাসেন এরদোয়ান। সমর্থকদের তিনি ‘অটোমান সুলতানদের নাতিপুতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ নামে ডাকেন তাদের। ২০১৭ সালে সরকারি স্কুলগুলোর এক অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তুরস্ক এমন ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী হবে, যেমন ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ছিল অটোমান সাম্রাজ্য।

ভৌগোলিক কারণে নিজ দেশের বাইরেও তুরস্কের নির্বাচন বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির বৈশ্বিক গুরুত্ব রয়েছে। কারণ দেশটির একদিকে ইউরোপ, অন্যদিকে ইরাক আর সিরিয়ার সীমান্ত। মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বেরও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, ন্যাটো জোটের সদস্য। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদপ্রার্থী। তুরস্কের সেনাবাহিনী ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাহিনী। জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল দূতাবাস স্থাপন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের মতো মুসলমানদের জন্য স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে বরাবরই আওয়াজ তুলেছেন এরদোয়ান। সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ প্রায় ব্যর্থ করে দেওয়ার পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ওই অবরোধকে ইসলামবিরোধী পদক্ষেপ বলে মনে করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। মূলত এরদোয়ান প্রশাসনের এমন নীতিগত অবস্থানের কারণেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির নির্বাচনকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিবার নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এরদোয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেকে পিছু হটবে না। একইসঙ্গে তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সরকারের নীতির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন এই ঝানু রাজনীতিক। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top