সকল মেনু

ইতিহাস সৃষ্টি করেন সংবেদনশীল লেখক, রাজা-মহারাজারা নয়: প্রণব

 হটনিউজ ডেস্ক: ইতিহাস সৃষ্টি করেন সংবেদনশীল লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, স্রষ্টা, রাজা-মহারাজারা নয়। অন্যদের পরীক্ষায় পাস করার জন্য মুখস্থ করতে হয়, পরীক্ষা হয়ে গেলে ভুলে যায়। কিন্তু শিল্পীর ছবি, একজনের লেখা, তার কবিতা, নিজের লেখা উপন্যাস কখনও ভুলে যায়? আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সেই আমন্ত্রণ রাখতে পেরে গর্বিত ধন্য মনে করছি। হয়তো এরপরও আরও কিছু কাজকর্ম হবে, কিন্তু আমার দায়িত্ব অনুযায়ী মুখ্য অতিথি হিসেবে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। সবার ভালো হোক।’

নিজের বই পড়া এবং পড়ার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘যখন রাজধানী কলকাতা থেকে কার্যালয় দিল্লী স্থানান্তরিত হয়, সে সময়ের বহু কাগজ গভর্নর জেনারেলের অফিসে নেওয়া হয়। তার মধ্যে অনেক গোপন ও প্রাচীন উপাদানও রয়ে গেছে। সেগুলো পড়তে অন্তত তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল টার্ম লাগবে। তা তো হবার নয়, যতটা পারা যায়, পড়তে আরম্ভ করলাম। অনেক বই রাষ্ট্রপতি ভবনে।’

পাঠক হিসেবে এই সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে নিজেকে ধন্য উল্লেখ করে প্রণব বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে সম্মেলনে গৃহীত ও আলোচিত বিষয়গুলোকে চয়ন করে দেখলাম, ঢাকা সংকল্প তৈরি হয়েছে। সঠিকভাবে বর্তমান বিশ্বের মূল্যায়ন হয়েছে সেখানে। শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক তারা অঙ্গীকার করেছেন- পৃথিবীর এই চেহারা পরিবর্তন করতে হবে, যে পৃথিবীতে মানুষ হিংস্রতার শিকার হচ্ছে কোনও কারণ ছাড়া।’

তিনি বলেন, ‘গত একদশকে যে সস্ত্রাসবাদী আক্রমণ হয়েছে, তার কারণ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা কী চান বোঝা যায় না। নিরীহ মানুষ প্রিয়জনের কাছে যাচ্ছেন, সেটা হাইজ্যাক করে লিভিং বোম্ব হয়ে গেল, কত মানুষের প্রাণ গেল। এই যে হিংস্রতা সেখানে মানুষ কিভাবে বাঁচবে। শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, এরচেয়েও বড় দূষণ মানুষের চিন্তায়, ভাবনায়, মনে, কাজে। সেই দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে হবে না। জাতিসংঘ করতে পারবে না। করতে পারবে— যারা শিল্পী, সাহিত্য স্রষ্টা, লেখক। যারা গত তিন দিনের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, তারাই নতুন পৃথিবী তৈরি করবেন। আছি একসঙ্গে মজুর-চাষীতে, মোরা নবযুগ স্রষ্টা। একুশে ফেব্রুয়ারিকে সারাক্ষণ স্মরণ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভারতের এই সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। আজকের বাংলা, তৎকালীণ পূর্ব বাংলা দীর্ঘ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে।তাদের উদ্দেশে সালাম ও প্রণাম। আনুষ্ঠানিকভাবে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি নয়, প্রতি মুহূর্তে মনে রাখতে হবে, আমরা দায়বদ্ধ তাদের কাছে। আমাদের এই ঐতিহ্য, হাজার বছরের ভাষাকে তারা রক্ষা করেছেন। লুট হয়ে যেতে দেননি। আগ্রাসকদের হাতে ধ্বংস হয়ে যেতে দেননি। বাংলাদেশের সরকার, বাংলা একাডেমি ঢাকা, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, ফেণ্ডস অব ইণ্ডিয়া সোসাইটি যাদের যৌথ উদ্যোগে সম্মেলন হলো, তাদের ধন্যবাদ। বাংলা সাহিত্য কেবল বাঙালি চিন্তা, তার ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন নয়, সর্বজনীনতার প্রতিফলন। সে কারণেই এই মঞ্চ থেকে এই সংকল্প নেওয়া সম্ভব, এই বিষাক্ত পৃথিবীকে রক্ষা করবো। আজকে এর প্রয়োজন আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top