সকল মেনু

নর্থ সাউথের শিক্ষক মুবাশ্বারকে কারা তুলে নিলো

হটনিউজ ডেস্ক: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের শিক্ষক ড. মুবাশ্বার হাসান সিজারকে কারা তুলে নিয়ে গেলো? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সংস্থা তাকে আটক করেছে, নাকি কেউ অপহরণ করেছে? নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। অপহরণ করা হলে অপহরণকারীদের মুক্তিপণ চাওয়ার কথা। কিন্তু বুধবার (৮ নভেম্বর) সারাদিনেও মুক্তিপণ চেয়েও ফোন করেনি কেউ। নিখোঁজ মুবাশ্বারের পরিবার ও স্বজনরা বুঝতে পারছেন না কিছুই। তাদের একটিই চাওয়া মুবাশ্বার যেন ফিরে আসে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মুবাশ্বারের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছেন। কেউ তাকে তুলে নিয়ে গেছে, নাকি নিখোঁজ হওয়ার পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খুঁজে দেখছেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। কোনও আপডেট তথ্য পাওয়া গেলেই বিষয়টি জানাবো।’

মুবাশ্বারের পরিবার, বন্ধু ও স্বজনেরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে কিছুটা আতঙ্কে ভুগছিলেন তিনি। সপ্তাহখানেক আগে অজ্ঞাত দুই যুবক ছাত্র পরিচয় দিয়ে তার বনশ্রীর বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল। একারণে বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন তাকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অনুসরণ করতে পারে, সে বিষয়ে কেউ বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

স্বজনরা জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এটুআই প্রকল্পের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগাঁরগাওয়ের আইডিবি ভবনে এটুআই প্রকল্পের একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। মিটিং শেষ করে আইডিবি ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। ব্যক্তিগত গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে তিনি সিএনজি বা উবারের গাড়িতে চলাফেরা করতেন। আইডিবি ভবন থেকে বেরোনোর আগে তিনি উবারের গাড়ি কল করেছিলেন বলেও জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, ড. মুবাশ্বার হাসান সিজারের সর্বশেষ অবস্থান ছিল আগারগাঁও আইডিবি ভবন এলাকাতেই। সর্বশেষ ৬টা ৪১ মিনিটে তিনি নিজের মোবাইল থেকে কল করেছিলেন। ৬টা ৪৫ মিনিটে তার নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়।

বন্ধু ও স্বজনরা বলছেন, ড. মুবাশ্বার বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এছাড়া, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় সম্পৃক্ততাও তার গবেষণার বিষয় ছিল। এসব কারণে তৃতীয় কোনও পক্ষ মতবিরোধের জেরে তাকে তুলে নিতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মুবাশ্বারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘সে এমনি এমনি নিখোঁজ হয়নি। এর নেপথ্যে কোনও কারণ অবশ্যই আছে।’ তিনি যে কোনও মূল্যে ছেলেকে ফেরত পেতে চান।

মুবাশ্বার বছর তিনেক আগে বিয়ে করলেও এক বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে তার। পারিবারিক কোনও বিরোধের জের ধরে তাকে কোনও পক্ষ অপহরণ করতে পারে কিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সেই বিষয়টিও খোঁজ-খবর করছেন। তবে পারিবারিক বিষয়ে ড. মুবাশ্বারের পরিবারের সদস্যরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

বছরখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেউ একজন ড. মুবাশ্বারের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার করেছিলেন বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা করার কথাও বলেছিলেন। সেই সূত্রে পুরনো কোনও শত্রু তাকে অপহরণ করেছে কিনা তাও আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বিকাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জিডি নম্বর ৪৭১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন সিজার। একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন। পরে যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top