সকল মেনু

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনসহ ১১ অভিযোগ

হটনিউজ ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র অস্ট্রেলিয়া যাত্রার পরদিনই তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছে সুপ্রিম কোর্ট। রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। অানীত অভিযোগগুলোর মধ্যে আর্থিক অনিয়মসহ দুর্নীতির কথাও বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে পাওয়া ১১টি অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা। কিন্তু, তিনি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় বিচারপতিরা তার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। এসময় এস কে সিনহা পদত্যাগ করবেন বলেও তাদের জানিয়েছিলেন।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা রাখার স্বার্থে ইতোপূ্র্বে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে কোনও প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে বিবৃতি প্রদান করা হলো।

শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে নিজ বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রধান বিচারপতি জানান, ‘আমি অসুস্থ না, আমি ভালো আছি, আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসবো। আমাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়নি। আমি নিজে থেকেই ছুটি নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটু বিব্রত, আমি বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। আমি চাই না, বিচার বিভাগ কলুষিত হোক। বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। কারও প্রতি আমার কোনও বিরাগ নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক, এটাই আমি চাই।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন শনিবার সুপ্রিমকোর্ট একটি বিবৃতি বিজ্ঞপ্তি আকারে দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ব্যতীত আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় বঙ্গভবনের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠকের এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন রাষ্ট্রপতি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় ফেরার পর ১ অক্টোবর বিচার বিভাগের পাঁচ বিচারপতি আবারও বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তাদের আনা ১১টি অভিযোগ বিশদভাবে পর্যালোচনা করা হয়। এরপর তারা এসব গুরুতর অভিযোগ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আরও সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি এসব অভিযোগের যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে তার সঙ্গে একসঙ্গে বিচার কাজে আর বসবেন না তারা। ওই সিদ্ধান্তের পর ওইদিনই বেলা সাড়ে ১১টায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার হেয়ার রোডের বাসায় সাক্ষাৎ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন।

কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরও তার কাছ হতে কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লেখিত মাননীয় পাঁচজন বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানান, এ পরিস্থিতিতে আনীত অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে তাদের জানান যে, তিনি পদত্যাগ করবেন। এ ব্যাপারে পরদিন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে পদত্যাগ না করে পরদিন ৩ অক্টোবর তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বরাবর এক মাসের ছুটির আবেদন করেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপতি তার ছুটির আবেদন গ্রহণ করেন। এবং এ পরিস্থিতিতে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়্ত্বি দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top