সকল মেনু

জোটের আসন ছাড় দিতে নারাজ তৃণমূল আ’লীগ

 স্টাফ রিপোর্টার: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগেই ভোটের সাজ সাজ রব তাদের কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে। চলছে হাইভোল্টেজ ক্যাম্পেইন, ঝড়ের গতিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম সংগঠন ও বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ কবির আহমেদ। তিনি ইতিমধ্যেই এলাকাবাসির প্রাণের মানুষ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে দশম নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মজিবুল হক চুন্নু। তবে এবার তাকে ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি, জোটগত সমঝোতায় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ভঙ্গুরদশা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতায় থাকলেও স্থানীয় এমপি দলের না হওয়ায় সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে নেই নেতাকর্মীরা। ওই আসনে দলের সাংগঠনিক শক্তি ফেরাতে এবার নৌকার প্রার্থী পেতে বদ্ধপরিকর তৃণমূলও।
নারায়নগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসন ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে এলাকার রাজনীতিতে নতুন মুখ লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী কায়সার হাসনাত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে এবার নিশ্চিত মনোনয়ন পাবেন। এই আশায় প্রতিদিনই এ আসনের এপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে নৌকার পক্ষে বৈরি আবহাওয়া উপক্ষো করে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় প্রাটির প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ফলে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া) আসনের এবার দলের প্রার্থী চায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী (জাপা) হিসেবে মনোনয়ন পান এডভোকেট সোহরাব উদ্দিন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমন কি তার ইন্ধনে অনেকের বিরুদ্ধে হয়রানীমুলক মামলাও করা হয়। তাই একাদশ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পেতে এবার (নৌকার প্রার্থী) মাঠে নেমেছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার বজলুল রহমানের ছেলে ডক্টর জায়েদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ও পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদকে চায় তারা। গত সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী করেনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। কিন্তু রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল এলাকার এই আসনটি এবার অন্য দলকে দিতে নারাজ দলটির নেতা-কর্মীরা। এ আসনে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এই আসনে বৃহত্তর নোয়াখালি এলাকার ভোটার রয়েছে। এছাড়াও এ এলাকায় দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতাও ব্যাপক। এ আসনে এবার সম্রাটের মনোনয়ন পাওয়ার জোর সম্ভবনা রয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের এক নম্বর সংসদীয় আসন পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজাহারুল হক প্রধান এমপি। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নিতে হয়। মূলত জাতীয় পার্টির সাথে আসন রফার কারণে কপাল পুড়েছিল মজাহারুল হক প্রধানের। এ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন জাতীয় পার্টির আবু সালেক ও মশাল মার্কা নিয়ে জাসদের নাজমুল হক প্রধান। এবার এই আসনে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক এমপি মজাহারুল হক প্রধান এমপি। এবার জোট প্রার্থীদের ছাড় দিতে নারাজ তিনি। একইভাবে সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ নুরুল ইসলাম। কিন্তু জোটের কারণে তাকে ছাড় দিতে হয়। ওই আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। এ আসনে এবার শেখ নুরুল ইসলাম জোর প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। শুধু মজাহারুল হক প্রধান বা শেখ নুরুল ইসলামই নয়, বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ করতে জোটের প্রার্থীদের কারণে বঞ্চিত হওয়া নেতারা এবার ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ততই বাড়ছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরিক দল থেকে হওয়া এমপিরা অনেকেই নতুন মুখ। এলাকায়ও অপরিচিত। ঘটনাচক্রে কেউ কেউ এমপি হয়েছেন। জোটের কারণে ছাড় দিয়ে এমপি বানানো হলেও তারা এখন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক রাখছেন না। ফলে বঞ্চিত নেতারা এবার ছাড় না দিতে বদ্ধপরিকর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের এমপি ২৩৪ জন। আওয়ামী লীগের শরিক জোট ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, তরীকত ফেডারেশনের দুজন, জাতীয় পার্টি-জেপির দু’জন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৩৪ জন, বিএনএফের একজন এবং স্বতন্ত্র ১৬ জন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ১৮ জন এমপি প্রথমবারের মতো নির্বাচিত। কেউ কেউ নির্বাচনী এলাকায় কোনো পদ-পদবিতেও নেই। আবার জোটের অন্য শরিকরা নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। প্রয়োজনেও কাছে পান না স্থানীয় এমপিকে।
আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনে জোটের কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ছাড় দিলেও দল হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশি¬ষ্ট এমপিরা নিজ নিজ দলকে শক্তিশালী এবং আওয়ামী লীগের ওপর ছুড়ি ঘোরাচ্ছেন। কোনো কোনো এমপির ইন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তারা মামলাও করছেন। ক্ষমতা নির্ভরতা ও চাওয়া-পাওয়ার নীতিতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ সংশি¬ষ্ট এমপির দলে ভিড়ছেন বলে খবর রয়েছে।
ঢাকা-৪ আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তৎকালীন এমপি এডভোকেট সানজিদা খানম। কিন্তু দলের নির্দেশে তাকে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে থাকতে হয়। এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হয়। এখানে আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাবেক এপিএস ড. আওলাদ হোসেন। এবার এই আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ সানজিদা খানম ও ড. আওলাদ হোসেন। তারা নিয়মিত গণসংযোগ করে চলেছেন।
একইভাবে গত দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য আসনটি প্রথমে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর এরশাদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আবুল কালাম আজাদের পক্ষে ভোট করেন। কিন্তু এবার তারা দলীয় প্রার্থী চান ঢাকার ভিআইপি আসনে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন। বরিশাল-৩ আসনে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান। জোটের কারণে বিগত নির্বাচনে ছাড় দিলেও এবার ছাড় দেবেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন একাধিকজনের নাম। এর মধ্যে যুবলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এমপি হন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এমএ আউয়াল। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জোর প্রচারণায় নামছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট শফিক মাহমুদ পিন্টু ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top