সকল মেনু

অংশগ্রহণমূলক ভোটের পরিবেশ তৈরির পরামর্শ সাংবাদিকদের

একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে যথাযথ পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ বিভিন্ন মত দিয়েছেন তারা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে দুই ধরনের মতই এসেছে।

বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে গণমাধ্যম কর্মীরা এসব পরামর্শ দেন। আজকের সংলাপে ২৬ জন গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশ নেন। বেলা সোয়া দশটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু করে ইসি। সেদিন সংলাপে অংশ নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচনে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, ‘না’ ভোট প্রবর্তন করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে আজ গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি।’

বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে কমিশনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান জানান, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সমর্থন করেন না তিনি। সেই সঙ্গে নামসর্বস্ব পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে যেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেয়া হয়।

‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।’

বুলবুল জানান, সার্বিকভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই বলে অনেকে মত দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন এখন যেভাবে মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেছেনে ‘নো’ ভোট না থাকা ভালো, কেউ কেউ বলেছেন ‘নো’ ভোট থাকতে পারে।

সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্ত নিশ্চিতে বিশেষ নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

শ্যামল বলেন, ‘এ নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে রয়েছে। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ইসির স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। এমন আচরণ করতে হবে যাতে জনগণের আস্থা তৈরি হয়। আস্থা অর্জনে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।’

শ্যামল দত্ত জানান, নির্বাচনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের জন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। সামনে সিটি নির্বাচনের ওপরই জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আস্থা তৈরির পথ প্রশস্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর জানান, এখন থেকেই সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরি করতে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইভিএম নিয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত বলেন, ‘বিদ্যমান সীমানাতেই ভোট করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতেই সীমানা পুননির্ধারণ করতে হবে। ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন হওয়ায় নতুন করে আর সীমানা পুননির্ধারণের দরকার নেই।’

তবে নতুন প্রশাসনিক এলাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহল যোগ করেই সংসদীয় আসনের গেজেট করার পরামর্শ দেন তিনি।

সেই সঙ্গে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান আশিস।

প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল যাতে নিবন্ধন না পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত যাতে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো ফরম্যাটে ভোট করতে না পারে সে বিষয়ে আইনি উদ্যোগ নিতে হবে।’

সংলাপে যারা ছিলেন

নূরুল কবীর, সাইফুল আলম, আশিস সৈকত, মোস্তফা কামাল, মতিউর রহমান চৌধুরী, খন্দকার মুনীরুজ্জামান, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, আনিস আলমগীর, মো. শফিকুর রহমান, ফরিদা ইয়াসমিন, সামশুল হক, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, মো. আব্দুল্লাহ, মাহফুজউল্লাহ, কাজী সিরাজ, আনিসুল হক, আমানুল্লাহ কবীর, গোলাম মর্তুজা, বিভুরঞ্জন সরকার, মাহবুব কামাল, সোহরাব হাসান, কাজী রোকনুদ্দীন আহমদ (ইসির তালিকার ক্রমানুসারে)।

যেসব সুপারিশ এলো

ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বেলা আড়াইটায় সংলাপের বিষয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রাপ্ত সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো:

১. সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রত্যাশা করেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।

২. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করার পরামর্শ;

৩. সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন কেউ কেউ; অধিকাংশই বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

৪. না ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত; কেউ ভালো বলেছেন, কেউ কেউ না ভোটের বিপক্ষে বলেছেন।

৫. দেশ-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

৬. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করার পরামর্শ;

৭. জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুননির্ধারণ করার পরামর্শ;

৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি;

৯. আচরণবিধি প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পরামর্শ;

১০. প্রবাসীদের ভোটার ও ভোট দেয়ার ব্যবস্থা;

১১. নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ;

১২. ধর্মকে যেন কোনোভাবেই ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে;

১৩. অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ;

১৪. প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হতে হবে;

১৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও কাউকে যেন ভোকেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে না হয়;

১৬. ইসিকে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে;

১৭. অনলাইনে মনোনয়ন নেয়ার সুযোগ দিতে হবে;

১৮. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে;

১৯. ভোটার ও প্রার্থীর আস্থা তৈরি করতে হবে;

২০. নারী ভোটার উপস্থিতি ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নিতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, ‘এ সংলাপে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার অনলাইন, টিভি ও রেডিও’র সঙ্গে বসবে ইসি। পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে বসে সব সুপারিশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।’

এ সংলাপের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top