সকল মেনু

আজ জাতীয় শোক দিবস


 

নিজস্ব প্রতিবেদক :  ঢাকার মসজিদে মসজিদে তখন আজান হচ্ছিলো। বাতাসে ভাসছিলো মুয়াজ্জিনের আহ্বান ‘আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম-ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম’। সেই আজানের ধ্বনিকে প্রতিধ্বনিত করে গর্জে উঠেছিলো ঘাতকের বুলেট। দস্যু-তস্কর নরাধমদের ছোড়া একটি বুলেট গোটা বাঙ্গালী জাতির তিলকে একে দিয়ে গেল জনক হত্যার দায়ে অভিশপপ্ত এক জাতি হিসেবে। আজ রক্তঝরা সেই ১৫ আগস্ট। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন।  বেদনাবিধুর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দিন। বিভিন্ন কবির অসংখ্য কবিতার পঙক্তিতে উঠে আসা সেই ধন্যপুরুষ স্বাধীন বাংলার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২ তম শাহাদাতবার্ষিকী। বাংলাদেশ ও বাঙালীর জন্য গভীর মর্মস্পর্শী শোকের দিন, জাতীয় শোক দিবস। কলঙ্কমুক্ত বাঙালী জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরন করবে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।
বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম  সেই পুরুষ তিনি, একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র  হিসেবে অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে (১৯২০-১৯৭৫) স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন, যে বন্ধন কোনদিন ছিন্ন হবার নয়। আজীবন ঔপনিবেশিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, দরিদ্র  নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে  এমন এক অনন্য ভ‚মিকা রেখেছিলেন, যার তুলনা বিরল। একজন প্রকৃত  নেতার যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন  তার সব গুণ নিয়েই জšে§ছিলেন ক্ষণজš§া এই মহাপুরুষ, যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুবর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। বর্বর পাকিস্তানীরা যার কেশাগ্র সম্পর্শ করার সাহস পায়নি- তাকেই জীবন দিতে হয়েছে কতিপয় বেঈমান বিশ্বাস ঘাতক নারাধম সেনাবাহিনীর বিপদগামী কিছু কুলাঙ্গারের হাতে।
রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্তে¡ও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দিনটি তাই বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত।।
ঘাতকদের তান্ডবে বত্রিশ নম্বরের পুরো বাড়িটিতে বয়ে ছিলো রক্তগঙ্গা , বাড়ির দেয়ালে লেগেছিলো মাংসের টুকরা,হাড়ের গুড়া। সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে দোতলার সিড়িতে পড়েছিলো জনকের লাশ।  অভ্যর্থনা কক্ষে শেখ কামাল, টেলিফোন অপারেটর, মূল বেডরুমের সামনে বেগম মুজিব, বেডরুমে সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, নিচতলার সিঁড়িসংলগ্ন বাথরুমে শেখ নাসের এবং মূল বেডরুমে দুই ভাবির ঠিক মাঝখানে বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ছোট্টশিশু শেখ রাসেলের লাশ।
সে দিন আরো হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি পানি সম্পদমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী আরজু মনি, সেরনিয়াবাতের কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলসহ কয়েক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
ইতিহাসের এ জঘন্য হত্যাকান্ডের বিচার হতে সময় লেগেছিলো ৩৫ বছর। সেনা নায়ক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে অধ্যাদেশ জারি করে খুনীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে রেখেছিলো। বিভিন্ন দূতাবাসে খুনীদের চাকুরী দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান-সে ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন এরশাদ ,খালেদা জিয়া।
আজ জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন আবহয়ে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এবার শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো মাস ব্যাপী কর্মসূচী গ্রহন করেছে। ১৫ আগস্টে জাতির জনকের সমাধি টুঙিাপাড়া সহ ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহন করেছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট গণভোজ ও দোয়ার অনুষ্ঠানের কর্মসূচী নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক দিবসে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top