সকল মেনু

ঘুড়ে দাড়াতে পারছে না রাণীরবন্দরের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীরবন্দরে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প আজ বিলুপ্তের পথে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সুতা ও কাঁচা মাল, পুঁজির অভাব এবং চোরা পথে আসা ভারতীয় নিন্ম মানের (রঙ্গ-চঙ্গা) কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে একের পর এক তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকজন যারা এ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে তাদের বাপ দাদার পুরনো পেশা হিসাবে আর কত দিন লোকসান গুনবে এই দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে তারা।
স্বাধীনতার পূর্বে চিরিরবন্দর উপজলার বৃহত্তর রাণীরবন্দর, সাতনালা, ভূষিরবন্দর, গছাহার, আলোকডিহি, বিন্যাকুড়ি, খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি, চন্ডিপাড়া কাচিনীয়া সহ অর্ধশত গ্রামের ২’ হাজারের বেশী পরিবার তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল ছিল। এখানে প্রায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। তাঁতের টুকটাক শব্দে ঘুম ভাঙ্গত। তাঁত শ্রমিকের কলরবে রাণীরবন্দর থাকত সব সময় সরগম। এখানকার তৈরী গামছা, তোয়ালা, শাড়ীসহ বিভিন্ন পণ্যের গুনগত মানের দেশ জুড়ে বেশ কদর ছিল। এখানকার তাঁত শিল্পের কাঁচামাল সুতা সরবরাহে সদরপুর (রামডুবি) দশ মাইলে প্রতিষ্ঠিত হয় দিনাজপুর ট্রেক্সটাইল মিল। তাঁত শিল্পকে ঘিরে ১৯৬৪ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাণীরবন্দর কোঃ অপাঃ ইন্ডাষ্ট্রিজ ইউনিয়ন লিঃ (হ্যান্ডলুম বোর্ড)। গ্রামীণ জনপদের উৎপাদনশীল এ জাতীয় শিল্পকে ধরে রাখতে স্থাপিত হয় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টার। কিন্তু হ্যান্ডলুম বোর্ড ও তাঁত বোর্ড (বেসিক সেন্টার) কোনটাই রাণীরবন্দরের তাঁত শিল্পকে টিকে রাখতে পারেনি। ফলে পুঁজির কাঁচামাল ও মূলধনের যোগান তথা সরকারী পৃষ্ঠ পোষকতার অভাবে টিকতে না পেরে রাণীরবন্দরের তাঁতীরা পেশা বদল করেই চলছে।
নশরতপুর বালাপাড়া গ্রামের তাঁতী আব্দুল মালেকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ১৯৮৭ ইং সাল থেকে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত। বর্তমানে রাণীরবন্দর এলাকায় তাঁতী নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকজন মিলে এ পেশা আঁকরে ধরে আছি। এই এলাকায় বর্তমানে আমি আর আমার ভাই আব্দুল খালেক ১০ ও ১২ জন শ্রমিক নিয়ে বাপ দাদার এই পুরোনো পেশা ধরেই এখনো জীবনযাপন করছি। তিনি জানান,উৎপাদিত এসব পন্য বিভিন্ন জেলা উপজেলার হাট-বাজরে সরবারাহ করে থাকি। আগের মত এগুলো কাপড়ে আর চলে না। এগুলো এখন যেন সে কালের হয়ে গেছে। তাছাড়া সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের মত আর মজুরি দিয়ে লাভ না হওয়ায় এ শিল্পকে আর বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
কথা হয় তাঁত শিল্পের শ্রমিক,সাদেকুল,মমিনুল,আনোয়ারসহ আরো অনেকের সাথে তারা জানায়, আগের থেকে অধিক হারে সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়াসহ বাজারের এসব কাপড়ের চাহিদা না থাকায় মহাজন আমাদেরকে টিক সময় টিক মত মজুরি দিতে পারে না। ফলে পেশা বদল করে আমাদের অন্য পেশায় যাইতে হচ্ছে। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, সুতা ও কাঁচা মাল, পুঁজির ব্যবস্থা এবং চোরা পথে ভারতীয় নিন্মমানের কাপড়র আসা বন্ধ করলে রাণীরবন্দরের তাঁত শিল্প পূণরুদ্ধারসহ তাঁতীদের রক্ষা করা সম্ভব ।

Exif_JPEG_420

এলাকার সচেতন মহল জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁত শিল্পীদের পর্যাপ্ত মূলধনের জোগান, সুষ্ঠুভাবে বাজারজাত করণের সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করা হলে এ এলাকার তাঁত শিল্প পূণরুদ্ধারসহ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top