সকল মেনু

সিদ্দিকুর রহমান তবুও অপারেশন চান

হটনিউজ ডেস্ক: তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন— যে চোখের আলোর আশায় পাশের দেশে গিয়েছিলেন তিনি, সে চোখের আলো ফেরার সম্ভাবনা আর নেই। তবুও সে চোখে অপারেশন চান দুই চোখ হারানো সিদ্দিকুর রহমান।
ডান চোখ নষ্ট হয়েছিল আগেই, এবার গেল বাম চোখের আশাও। তবুও আশায় বুক বেঁধেছেন— যদি কিছু ঘটে যায়, মিরাকেল বলেওতো কিছু একটা আছে পৃথিবীতে। সেই মিরাকেলে যদি তার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়, তাহলে দায়িত্ব নিতে পারবেন পরিবারের।

উল্লেখ্য, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই সকাল ১০টার দিকে শাহবাগে নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশের টিআর সেলের গ্যাসে গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। এরপর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ শুরু হলে, হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের তত্ত্বাবধানে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসরা তাকে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন।

চেন্নাই যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখতে যান সিদ্দিকুরকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সিদ্দিকুর জানিয়েছিলেন তার মা ছাগল আর মুরগী বিক্রি করে। বড় ভাই নওয়াব আলী নিজের পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করে তাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। অন্তত এক চোখে দেখতে পেলে তিন বছর বয়সে বাবা হারানো সিদ্দিকুর পরিবারের হাল ধরতে পারবেন। সিদ্দিকুর সেই আশ্বাস পেয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে থেকেও। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তাকে দেখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি সুস্থ হয়ে আসো, তোমার ব্যবস্থা করে দেবো।’

সিদ্দিকুর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন, ইচ্ছে ছিল বিসিএস দিয়ে বড় কর্মকর্তা হবেন। সে লক্ষে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ইংরেজিতে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু যেদিন তার ক্লাস করার কথা সেদিন সিদ্দিকুর রহমান হাসপাতালে।

ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতে এখানকার চিকিৎসকরা তাকে আশার আলো দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘বাম চোখে কানের পাশ দিয়ে আলো ফেললে তিনি সে আলো দেখতে পাচ্ছেন। এতে চিকিৎসকদের সঙ্গে সঙ্গে আশা দেখেছিল পুরো দেশবাসী। কিন্তু আজ আশাহত হলেন সিদ্দিকুরসহ সবাই। শংকর নেত্রালয়ের চিকিৎসক তাদেরকে জানিয়েন, সিদ্দিকুরের বাম চোখে দৃষ্টি ফেরার কোনও সম্ভাবনাই নেই, তার ডান চোখের সঙ্গে সঙ্গে বাম চোখও নষ্ট হয়েছে। প্রথমে চিকিৎসকদের এ সিদ্ধান্ত জানার পর সিদ্দিকুর ভেঙে পড়লেও পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অপারেশন করবেন। বন্ধু শেখ ফরিদকে ফোনে তিনি বলেছেন, ‘যদি এখানে না আসতাম তাহলে কোনও কথা ছিল না। কিন্তু যখন এসেছি, তখন অপারেশনটা করেই যাই। তাতে মানসিক শান্তি থাকবে— চিকিৎসার কোনও ত্রুটি আমরা করিনি। আর এখন বিষয়টা ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি। অপারেশনটা করি, যা হবার তাই হবে। এখনতো কিছু করার নেই।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top