সকল মেনু

নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করলেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পদ ছাড়লেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অযোগ্য ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। শুক্রবার (২৮ জুলাই) পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় নওয়াজের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কিছু সময় পর তিনি পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এবং এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নওয়াজের পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করেছে। বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসার নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ আদালত বলছে, পার্লামেন্ট এবং আদালতের প্রতি সৎ ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী, তিনি দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। আমিরাতভিত্তিক অফশোর কোম্পানি এফজেডই-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা গোপন করার কারণে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার খানিক বাদেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। জারিকৃত নোটিতে বলা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের রায় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এ মামলায় শুনানি হয়েছিল আদালতের দুই নম্বর কক্ষে। রায় ঘোষিত হয়েছে এক নম্বর কক্ষে। পাকিস্তানের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা আধ ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। বেলা ১২টার খানিক পরে বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসা রায় ঘোষণা করেন।সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষিত রায়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ পার্লামেন্ট ও আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি তার দফতরের জন্যও উপযুক্ত বলে গণ্য হননি’। সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার পদ ধরে রাখার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন।
তদন্তে বেরিয়ে আসা সব তথ্য-প্রমাণাদি ছয় সপ্তাহের মধ্যে রেফারেন্স আকারে অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। পাকিস্তানের শীর্ষ দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো জেআইটি’র (যৌথ তদন্ত দল) তদন্তের ভিত্তিতে ওই রেফারেন্স তৈরি করে অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্টে পাঠাবে। ওই তথ্য-প্রমাণাদির ওপর ভিত্তি করে নওয়াজের পাশাপাশি তার মেয়ে মরিয়ম, ছেলে হাসান ও হুসেন নওয়াজ, জামাতা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সফদার এবং অর্থমন্ত্রী ইশাক দারের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। ৬ মাসের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ওই মামলার চূড়ান্ত রায় দিতে বলা হয়েছে অ্যাকাউন্টিবিলিটি আদালতকে। সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা বিচারপতিদের একজন তা পর্যবেক্ষণ করবেন। শুক্রবার, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দারকেও তার পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
নওয়াজ শরিফ

২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাঘববোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে সাড়া ফেলে আলোচিত ‘পানামা পেপারস’। ফাঁস হওয়া ওই গোপন নথিতে অর্থ পাচারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছেলের নাম উঠে আসায় নিজ দেশে চাপের মুখে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিরোধী দলগুলো থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বহুল আলোচিত পানামা পেপারস ফাঁসের পর বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেয় আদালত।

গত এপ্রিলে বিরোধী দলগুলোর এ সংক্রান্ত মামলায় বিভক্ত রায় দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেলের মধ্যে তিনজন নওয়াজের পক্ষে এবং দুজন তার বিরুদ্ধে রায় দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি পেয়ে যান নওয়াজ। পাঁচ বিচারপতি আসিফ সায়্যিদ খোসা, গুলজার আহমেদ, এজাজ আফজাল খান, আজমত সায়্যিদ ও ইজাজুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। তাঁদের মধ্যে বিচারপতি খোসা ও গুলজার নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। বাকি তিন বিচারপতি যৌথ তদন্ত দল গঠনের পক্ষে রায় দেন। আর সেই দলের তদন্তের পর এবার নতুন রায় ঘোষিত হলো নওয়াজের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানে কোনও বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী কখনও পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো শেষ করতে পারেননি। তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া নওয়াজের মেয়াদ শেষ হতে আর এক বছরেরও কম সময় বাকি ছিল। আর সেই সময় সময় শেষ হওয়ার আগেই তার বিদায় নেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top