সকল মেনু

এবার ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরাতে আগস্টেই খসড়া বিধি চূড়ান্ত !

হটনিউজ ডেস্ক: ইউরোপ থেকে আনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউরের (এসওপি) খসড়া আগামী মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করতে চায় সরকার। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আগস্টে বৈঠক করতে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা করার জন্য আমরা এসওপি করব। এ লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার জন্য এ সপ্তাহে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেন আগামী মাসের মধ্যে এর খসড়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েক হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশির জন্য ইউরোপে অবস্থানরত কয়েক লাখ বৈধ বাংলাদেশি ভিসাধারীর অসুবিধা হোক, এটা আমরা চাই না। এছাড়া এদের জন্য আমাদের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যকে বাদ দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য ২৭টি দেশে প্রায় দুই লাখ বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তাদের প্রত্যেকের থাকার ও কাজ করার অনুমতি আছে।
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ২৬ হাজার, ২০১৫ সালে প্রায় ২১ হাজার ও ২০১৬ সালে প্রায় ২৫ হাজার রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু করেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই পারমিট ইস্যু হয়েছে মাত্র ৪ হাজার একশটি।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা  বলেন, ‘এ বছর পারমিট ইস্যু কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিতে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের অবস্থান।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে আট হাজারেরও বেশি এবং চলতি বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট হাজার বাংলাদেশি ইটালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। এত বেশি পরিমাণে বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারকেও এসব অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে বলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার তিনশ বাংলাদেশি ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ১১ হাজার আটশ আবেদন খারিজ করা হয়েছে।’ বাকি আবেদনগুলোরও বেশিরভাগই খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘খারিজ হওয়া এই আবেদনকারীদের ইউরোপে অবস্থান করার কোনও অধিকার নেই। নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে তাদের সবাইকে ফেরত নিয়ে আসা হবে।’ গোটা ইউরোপে অনিয়মিত বাংলাদেশির সংখ্যা কত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর সঠিক কোনও তথ্য কারও কাছে নেই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ইউরোপে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো অনিয়মিত বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আসার জন্য প্রায় সাড়ে চার হাজার ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছে। অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার কোনও অভাব নেই। কারণ এদের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং বৈধরা অসুবিধার মুখে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, এখন যারা রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করছে, তারাও ভিসার জন্য উপযুক্ত হলেও তাদের ভিসা দিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।’
ইউরোপ থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি বাস্তব সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও পদ্ধতিগত কারণে এবং ইউরোপের বিভিন্ন নিয়মের কারণে তাদের ফেরত আনা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘কাউকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হচ্ছে অনিয়মিত ব্যাক্তির নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়া। এক্ষেত্রে অনিয়মিত ব্যক্তির পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে তখন তার কাছে বাংলাদেশের ঠিকানা চাওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে অনিয়মিত ব্যক্তি ভুল ঠিকানা দিলে তার নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে অন্য একটি সমস্যা হলো— বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর জন্য যখন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের কেউ কেউ চিৎকার শুরু করেন বা কাউকে আক্রমণ করে বসেন। এরকম উগ্র আচরণকারী কোনও ব্যক্তিকে কোনও বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্স তাদের বিমানে চড়ার অনুমতি দেয় না।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরোপ থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে চাই এবং এ কারণেই আমরা তাদের সঙ্গে এসওপি যত দ্রুতসম্ভব সই করব।’
এসওপিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে একটিতে বলা আছে, সম্ভব হলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল পাঠাতে হবে, যারা ইউরোপে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এসব প্রস্তাব প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি সম্ভব নয়। কারণ অনিয়মিত ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাংলাদেশ ছাড়া নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হয়েছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top