সকল মেনু

এবার পুরনো গাইডলাইনেই আইএসপি’র লাইসেন্স ফি বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের !

হটনিউজ প্রতিবেদক: ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত কোনও গাইডলাইন তৈরি হয়নি। লাইসেন্স নেওয়ার জন্য রয়েছে কেবল ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’। অথচ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইএসপির জন্য নতুন কোনও গাইডলাইন নয়, পুরনো গাইডলাইনেই লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠাবে বিটিআরসি! আর এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ক সংগঠন আইএসপিএ-বি রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, “লাইসেন্সিং ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’কে হয়তো গাইডলাইন হিসেবে ধরা হয়েছে।” সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই গাইডলাইন আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু তা না করে ফি বৃদ্ধির জন্য ‘গাইডলাইন’ প্রণয়ন না করে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনকে গাইডলাইন ধরা দুঃখজনক।

প্রসঙ্গত, গত ৮ মে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি বৈঠকে (বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত) সিদ্ধান্ত হয়, ‘আইএসপির জন্য নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন না করে বিটিআরসি বর্তমান গাইডলাইনেই লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রেরণ করবে।’ ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি দেশের সব আইএসপিকে তাদের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট জমা দিতে বলে। জানা গেছে, কোনও আইএসপি প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিতে বার্ষিক অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি। আইএসপিএবি বলছে, সাংগঠনিকভাবে এবং আলাদা করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনও অডিট রিপোর্ট বিটিআরসিতে জমা দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি তা সংগঠনটির একজন নেতার কাছে জানতে চাইলে নিজেকে উদ্ধৃত না করে তিনি বলেন, ‘আসলে বিটিআরসি চেয়েছিল কোন আইএসপি কেমন ব্যবসা করছে তা জানতে। এটা জানতে পারলেই তো লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি করা সহজ হয়ে যায়।’

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএ-বি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আইএসপির কোনও গাইডলাইন নেই, হয়নি কখনও। এবার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই মতে আমরা গাইডলা্ইনের একটা প্রস্তাবনাও জমা দিয়েছিলাম বিটিআরসি এবং আইসিটি বিভাগে। এখন শুনছি গাইডলাইনই হবে না।’ তিনি জানান, লাইসেন্সিংয়ে যে ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’ ছিল সেটাকেই হয়তো গাইডলাইন হিসেবে ধরে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আইএসপির জন্য একটা গাইডলাইন হচ্ছে এমনটা নিশ্চিত ছিলাম। যেহেতু নতুন গাইডলাইন তৈরি না করে পুরনোতেই (টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন) লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে ফলে আর কোনও গাইডলাইন হচ্ছে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, আইএসপির কোনও গাইডলাইন না থাকলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য ‍পৃথক একটি নীতিমালা রয়েছে।

‘জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা-২০০৯’ শিরোনামের ওই নীতিমালা এখনও সাম্প্রতিকীকরণ করা না হলেও এরইমধ্যে ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞা দুইবার পরিবর্তন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রডব্যান্ড নীতিমালার মতো আইএসপিরও একটি পৃথক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।

আইএসপিএ-বি’র সভাপতি আরও বলেন, ‘আমরা যতদূর জানতে পেরেছি যে লাইসেন্স ফি আগে ১ লাখ টাকা ছিল তা বাড়িয়ে সবার জন্য ২৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটা অনেক বেশি। আমাদের প্রস্তাব ছিল, যেসব আইএসপি একেবারে নতুন হিসেবে লাইসেন্স গ্রহণ করবে তাদের লাইসেন্স ফি ৫০ লাখ টাকা করা হোক। তাহলে বড় বড় নতুন প্রতিষ্ঠান আসবে, বড় বিনিয়োগও আসবে। লাইসেন্স ফি কম থাকায় বড় বড় বিনিয়োগ এ খাতে আসছে না। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান একাধিক লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। কোনও অপরাধে জড়িয়ে লাইসেন্স হারালে আরেকটি লাইসেন্স নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করছে। এসব হলে তাহলে আর পুরনো কোম্পানিকে নতুন কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে না। এমনিতেই বাজারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।’

জানা গেছে, আইএসপির লাইসেন্সিং ফি অনুসারে, নেশনওয়াইড আইএসপির বার্ষিক লাইসেন্স ফি এক লাখ টাকা, সেন্ট্রাল জোন ৫০ হাজার ও জোনালের ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এ ক্যাটাগরির ফি ৫ হাজার টাকা, বি ক্যাটাগরির ২ হাজার ৫০০ এবং সি ক্যাটাগরির লাইসেন্সের জন্য বার্ষিক লাইসেন্স ফি দিতে হয় ৫০০ টাকা।

উল্লেখ্য, আইএসপি লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ৬ ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে বিটিআরসির তথ্যমতে, নেশনওয়াইড ১২৯, সেন্ট্রালজোন ৭০ এবং জোনাল ৭৬টি লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া ক্যাটাগরি এ, বি ও সিতে যথাক্রমে ২২৮, ৩১ ‍ও ৯১টি লাইসেন্স রয়েছে। এরমধ্যে এ, বি ও সি ক্যাটাগরির লাইসেন্সে আইএসপিএবি ও সাইবার ক্যাফে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top