সকল মেনু

সুপ্রিমকোর্ট আজ খুলছে : আলোচিত মামলাগুলোর শুনানী শুরু

হটনিউজ ডেস্ক: সরকার ঘোষিত ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং কোর্টের অবকাশ শেষে আজ রবিবার থেকে সুপ্রিমকোর্ট খুলছে। দীর্ঘ ২২ দিন পর সর্বোচ্চ আদালতে শুরু হচ্ছে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম। গত ৯ জুন থেকে গতকাল ১ জুলাই পর্যন্ত সরকার ঘোষিত ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং কোর্টের অবকাশের কারণে সুপ্রিমকোর্টের নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

তবে এ সময়ে জরুরী বিষয় শুনানি ও নিস্পত্তির জন্য সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে চেম্বার কোর্ট এবং সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে অবকাশকালীন বেঞ্চ গঠন করে দেয় প্রধান বিচারপতি। এসব আদালতে অবকাশের সময় বিভিন্ন মামলা শুনানি ও নিস্পত্তি হয়।

আজ রবিবার সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর থেকেই নিম্ন আদালতে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালা, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিলের রায়, সাত খুন মামলার আপিল শুনানি, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার শুনানি, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদের রিটের শুনানি, রমনায় বোমা হামলা মামলার মত আলোচিত মামলার শুনানি ও রায় হবে। এই সময় সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি থাকবে সুপ্রিম কোর্টের দিকে।

আলোচিত সাত খুন মামলার আপিল শুনানি:
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। গত ২২ মে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে আপিল শুনানি শুরু হয়। কয়েকদিন শুনানির পর অবকাশকালীন ছুটির পর এই মামলার আপিল শুনানি মুলতবি ছিল।

আজ রবিবার কোর্ট শুরু হওয়ার পর এই মামলার শুনানি যথারীতি চলবে।

এর আগে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নুর হোসেনসহ আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের প্রাক্তন কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি নয় আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিলের রায়
সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতাসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলার রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ। এর আগে, গত ১ জুন শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

গত ৮ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে টানা ১১ দিন শুনানি হয়।

আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ এমিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।

অপর নয় এমিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে এমিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা :
বহুল আলোচিত দর্জি দো্কানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি প্রায় শেষের দিকে। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে। কোর্ট খোলার পর এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করবেন।

গত ১৬ মে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি।

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নির্মমভাবে খুন করেন দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে। শাঁখারীবাজারে বিশ্বজিতের দর্জি দোকান ছিল। তিনি থাকতেন লক্ষ্মীবাজার। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর।

রমনায় বোমা হামলার মামলা :
রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার আপিল শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরপরই এ মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করার কথা রয়েছে।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন।

পিলখানা হত্যা মামলার আপিলের রায় :
বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ঘোষণা যে কোন কার্যদিবসে করবেন হাইকোর্ট।

গত ১৩ এপ্রিল বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।

ব্যারিস্টার মওদুদের রিটের শুনানি:
গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের দায়ের করা রিটের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। গত ৮ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগির হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন রাখেন।

নোটিশ না দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের গুলশান-২-এর বাড়িতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর বৈধতা চ্যালঞ্জ করে ৮ জুন সকালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে এই বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করছিলেন মওদুদ আহমদ। আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর গত ৭ জুন তাকে বাড়িটি ছাড়তে হয়েছে। ওইদিনই রাজউক বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে।

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন:
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ সংক্রান্ত শুনানির জন্য আগামীকাল রোববার দিন ধার্য রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সরকারকে সময় দিয়েছিলেন। এর আগেও গেজেট প্রকাশে কয়েক দফা সময় নেয় সরকার। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর তলব করেন আপিল বিভাগ।

গত বছর ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

এছাড়া খালেদা জিয়ার ৪ মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে রুলের শুনানি, এক শ্রমিককে নাকে খত দেওয়া নিয়ে চেয়ারম্যান-ওসিকে তলবের শুনানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও রিটের শুনানি শুরু হবে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর।

এছাড়া খালেদা জিয়ার চার মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে রুলের শুনানি, এক শ্রমিককে নাকে খত দেয়া নিয়ে চেয়ারম্যান-ওসিকে তলবের শুনানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও রিটের শুনানি শুরু হবে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top