সকল মেনু

মিতু হত্যার রহস্য অধরা মুসাতেই আটকা

মেহেদি হাসান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঘটনার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত এখন আটকে রয়েছে কথিত মুসাতেই। মুসাকে গ্রেফতার করতে না পারায় মামলার চার্জশিটও দিতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রাম পুলিশ।

গত বছর এই দিনে (৫ জুন) সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন তত্কালীন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের কথিত পরিকল্পনাকারী হিসেবে বারবার কথিত মুসার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসলেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি, তাকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

পুলিশের দাবি, মুসাকে গ্রেফতার করতে পারলেই আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ জানা যাবে। কেন ও কার নির্দেশে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে এ তথ্যও বেরিয়ে আসবে।

গত বছরের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় মাহমুদা খানম মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায় তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী। পরে ওই ঘটনায় বাবুল আক্তার নগরীর পাঞ্চলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের নামে একটি মামলা করেন। মামলাটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত করছে।

মামলার নয় আসামির মধ্যে মুসা এবং কালু ছাড়া অন্যদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত পাঁচজন আসামি এখন কারাগারে রয়েছেন। তবে নুর নবী ও নুরুল ইসলাম রাশেদ নামে আরও দুই আসামি পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।

এদিকে, মিতু হত্যার পরদিন নগরীর বাদুরতলা এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ১১ জুন মতিঝর্ণা এলাকা থেকে শাহ জামান রবিনকে আটক করে আদালতে হাজির করা হয়।

২৬ জুন হত্যাকারী মোতালেব মিয়া ওয়াসিম এবং আনোয়ারকে আটক করে গোয়েন্দারা। স্বীকারোক্তিতে তারা দাবি করেন, ‘মুসা এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে এবং টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া করা হয়। ঘটনার দিন মুসা মিতুর মাথায় গুলি করে এবং নবী তাকে ছুরিকাঘাত করে। রাশেদ, শাহজাহান ও কালু তাদের সহযোগিতা করে। অস্ত্র সরবরাহ করে ভোলা।’

২৮ জুন নগরীর বাকালিয়া এলাকা থেকে অস্ত্রসহ এহতেশামুল হক ভোলা ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া এবং তার সহযোগী মনিরকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগে রাঙ্গুনিয়া থেকে মুসার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম সাকু এবং শাহজাহানকে আটক করে। তবে পুলিশ বলছে অধরা মিতু হত্যার পরিকল্পনাকারী মুসা।

মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, মিতু খুন হওয়ার ১৬ দিন পর তার স্বামীকে নগরীর বন্দর এলাকার একটি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপর মুসাসহ তিনজনকে ঢাকায় নিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা হয়। বাকি দুইজনকে চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনা হলেও মুসাকে আর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ মুসার স্ত্রীর এ দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

স্ত্রী হত্যার ১৯ দিনের মাথায় এসপি বাবুলকে ঢাকার মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এ সময় তার চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এর ছয় মাস পর বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামের ডিবি কার্যালয়ে জেরা করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিতুর বাবা-মা। এ সময় তারা গণমাধ্যমের সামনে বাবুল আক্তারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

পরবর্তীতে গায়ত্রী নামে এক ভারতীয় নারী ও এসআই আকরাম নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী বহ্নির সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এসআই আকরাম হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত ছিলেন দাবি করে আকরামের বোনেরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা চট্টগ্রামে এসে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তবে মিতু হত্যার সঙ্গে বাবুলের পরকীয়ার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সিএমপি পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, হত্যাকাণ্ড কে বা কারা কিভাবে ঘটিয়েছে তা পরিষ্কার। মুসার নেতৃত্বেই হত্যার ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। তবে মুসা কোন স্বার্থে করেছে তা পরিষ্কার নয়। নিজের স্বার্থে করেছে নাকি অন্য কারো প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মুসাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে এর সব উত্তরই মিলে যাবে।

তিনি বলেন, মুসাকে গ্রেফতারে আমরা সীমান্তে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিয়েছি। মুসাকে ধরতে ইতোমধ্যে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে পাওয়া গেলে পুরো ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে মামলার চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top