সকল মেনু

আগামি জুলাই থেকে রোডম্যাপ ধরে চলবে ইসি

হটনিউজ ডেস্ক: নির্বাচন কমিশনএগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে খসড়া রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই খসড়া রোডম্যাপটি নিয়ে রবিবার (১৪ মে) কমিশন বৈঠকে বসে, তবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠক বসবে আগামী ২৩ মে। ওই বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। এরপর আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত হবে এই রোডম্যাপ। আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ধরে ইসির পথচলা; অব্যাহত থাকবে ২০১৯ সালের জানুয়ারির অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন সচিবালয় থেকে প্রাথমিকভাবে ২৩টি এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করে রোডম্যাপের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দুই দফা সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এছাড়া আইন-সংস্কার, ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রমও থাকছে এই রোডম্যাপে। আগামী বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ধরে খসড়া রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। রোডম্যাপে তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগে সব ধরনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকছে।

সংসদ সচিবালয়ের প্রণীত খসড়া রোডম্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইসি জুলাইয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালাসহ সংশ্লিষ্ট ৮টি আইন ও বিধি সংস্কার নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনী সংশোধনীর সুপারিশ তৈরি করা হবে। জানা গেছে, আইন ও বিধি সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী কোরবানির ঈদের পরপরই চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম দফায় ও আগামী বছর নির্বাচনি সময়সূচি ঘোষণার ২৫ দিন আগে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণসহ সার্বিক ধারণা নেওয়ার জন্য প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা করবে। এ বছর সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিধি সিনিয়র সাংবাদিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও ইসি সংলাপে বসবে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে সংলাপের কথা বলা হলেও বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সংলাপের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি রমজানে আমাদের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এরপর জুলাইয়ে আমরা সংলাপে বসতে পারব। তবে, চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলব না, চূড়ান্ত হলেই আপনাদের জানাব।’

রোডম্যাপের খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আমরা যে সময়সীমা ধরে খসড়া প্রণয়ন করেছে তাতে জুলাইয়ে সংলাপ শুরু করা হয়তো সম্ভব হবে না। সংলাপের আগে এজেন্ডা তৈরিসহ কিছু হোমওয়ার্কের বিষয় রয়েছে। এ জন্য কিছুটা সময় দরকার হবে।’ কোরবানির ঈদের পরপর সংলাপ শুরুর সম্ভাবনার কথা জানান ওই কর্মর্কতা।

এ বছরের নভেম্বরে আইনবিধি সংশোধন সম্পন্ন করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো, ডিসেম্বরে আইনবিধি চূড়ান্ত করা হবে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী আগস্টে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, সেপ্টেম্বরে ৩০০ সংসদীয় আসনের খসড়া তালিকা প্রণয়ন, অক্টোবরে নির্বাচনি আসনের প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন ও খসড়া তালিকা প্রকাশ, নভেম্বরে দাবি-আপত্তি ও সুপারিশের ওপর শুনানি গ্রহণ করে নিষ্পত্তি করে ডিসেম্বরে সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

রোডম্যাপে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও খসড়া প্রকাশ, আপত্তি-নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। অবশ্য প্রচলিত আইন অনুযায়ীই প্রতি জানুয়ারিতে হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

হালানাগাদের পর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ নির্বাচনি এলাকার ছবিসহ ভোটার তালিকা, ছবি ছাড়া সিডি প্রস্তুত, জুনে মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের পর ভোটার তালিকা মুদ্রণ, আগস্টে প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনি এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকা, সিডি প্রস্তুত ও মাঠপর্যায়ে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলের অভিমত নেওয়ার পর জানুয়ারি মাসে এগারোতম সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। ফেব্রুয়ারিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারে উপযোগী করা, সময়সূচি ঘোষণার ৩০ দিন আগে ইভিএম ব্যবহারের উপযোগিতা সংক্রান্ত প্রচার চালানো, সময়সূচি ঘোষণার ১০ দিন আগে মক ভোটিংয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।

নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অ্যাকশন প্ল্যান বা রোডম্যাপ তৈরি করছে ইসি সচিবালয়। রমজানের পরে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হবে। আমরা এটা নিয়ে বসব, চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করব। সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে কী কী করতে হবে, তার সবই এই অ্যাকশন প্ল্যানে থাকবে। রোডম্যাপ চুড়ান্ত হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে এটার ঘোষণা করব। এরপর থেকে সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করব।’ তিনি জানান, ‘নির্বাচনি বিষয়ে রোডম্যাপের কাজ ধরে এগোনো হবে। সেক্ষেত্রে সবার অভিমত নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘রোডম্যাপ নিয়ে রবিবার কমিশন বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কমিশনাররা অবজারেভশন দিয়েছেন। আগামী ২৩ মে কমিশন আবারও বৈঠকে বসবে। আশা করি, ওই বৈঠকে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হবে। চূড়ান্ত হলে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে আমাদের জুন মাস লেগে যেতে পারে। আর জুলাই থেকে রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।’ রোডম্যাপ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আগে আরও কিছু কার্যক্রম রয়েছে বলেও জানান ইসি সচিব।

চলতি দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়। মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে হতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top