সকল মেনু

এরশাদ ফুরফুরে , চাঙ্গা জাপা

হটনিউজ ডেস্ক: এইচএম এরশাদদীর্ঘ ২৫ বছর পর রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেয়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিএনপির আমলে করা এই মামলার রায় আজ (বুধবার) ঘোষণার পর তার দলেও এসেছে স্বস্তি। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, ২৫ বছর ধরে এই মামলা বয়ে বেড়াচ্ছিলেন এরশাদ। পুরো সময়টাতে দেশের সবগুলো সরকার তার মামলাটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের কারণে, মুক্তভাবে কাজ করতে পারেনি জাতীয় পার্টি। পাশাপাশি এ নিয়ে বিভিন্ন দল বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ফায়দা গ্রহণ করেছে। মামলা থেকে এরশাদ খালাস পাওয়ায় এ বিষয়টিও বন্ধ হবে বলেই মনে করছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা।

জানতে চাইলে এরশাদের ছোটভাই, জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খালাসের বিষয়টি দলের নেতাকর্মীদের ওপর অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে তার মামলা-মোকাদ্দমা নিয়ে টেনশন থাকে। এই মামলাগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়। ফলে সব সরকারের আমলে জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে মুক্তভাবে কাজ করতে পারে না। এরশাদের মামলার কারণে বিভিন্নভাবে দলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো। আর যেহেতু উনিই জাতীয় পার্টির সব, সেহেতু ওনাকে নিয়ন্ত্রণ করা মানেই পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা।’

জিএম কাদের আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এবং তিনিও মনে করেন, ২৫ বছর পর বলা হচ্ছে,যে আপনি নির্দোষ। এই এতগুলো বছর ওনাকে আদালতের দরজায় যেতে হয়েছে। টেনশনে থাকতে হয়েছে। উকিল দিতে হয়েছে। এটা আমাদের দেশের জন্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। এখন নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় বুঝা যাচ্ছে, কিছু লোক তাকে রাজনৈতিকভাবে হ্যারাজমেন্ট করার জন্য মামলা দিয়েছিল। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তিনি এখন মুক্তভাবে কাজ করতে পারবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এরশাদের একজন পারিবারিক সদস্য বলেন, ‘২৫ বছর ধরে মামলা চলছে। নিম্ন আদালতে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ডেফিনেটলি আমরা সবাই খুশি হয়েছি। দলের সবাই খুশি হয়েছেন। কারণ, মামলাটা ওনার জন্য একট বড় বাধা ছিল। এ মামলা ওনার শরীর-স্বাস্থ্য ও মনের ওপর প্রভাব ফেলছিল।’

যোগাযোগ করলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যরি, এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’

বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে রাডার ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ তিনজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. কামরুল হোসেন মোল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ নথি ও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায় ঘোষণাকালে জানিয়েছেন আদালত।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই মামলাটি ছিল রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও চার্জশিট দাখিল থেকে শুরু করে সবকিছুই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আদালতে এসে ন্যয়ব্চিার পেয়েছি ।’

জাপার একাধিক সূত্র জানায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা চলছে। এর মধ্যে মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে পতনের আগে বাসায় নগদ অর্থ রাখা সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নব্বইয়ের দশকে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলা করেছিলেন এরশাদের বিরুদ্ধে। যদিও ওই মামলায় এখনও চার্জশিট গঠন হয়নি। বাসায় টাকা রাখা সংক্রান্ত মামলার রায় আগামী ৯ মে ঘোষণা হতে পারে বলে জানান জিএম কাদের।

এরশাদ প্রসঙ্গে সাংবাদিক সোহরাব হাসান তার এক লেখায় বলেছেন, ‘তিনি নিজেকে যতই সাচ্চা বলে দাবি করুন না কেন, সেই সময়ের দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকাগুলো তার অপরিমেয় দুর্নীতির সাক্ষী হয়ে আছে। একাধিক মামলায় তিনি দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হলেও অনেক মামলায় খালাস পেয়েছেন, অনেক মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। লন্ডনভিত্তিক পাকিস্তানি ব্যাংক বিসিসিআইয়ের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি সালেহ নাকভি আমেরিকার ফেডারেল কারাগারে আইনজ্ঞদের সামনে এক হলফনামায় যে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, তা থেকে আমরা বিদেশে এরশাদের অর্থ পাচারের বড় প্রমাণ পাই। তার ভাষ্যমতে, বিসিসিআিইয়ের লুক্সেমবার্গ শাখায় এরশাদের এক কোটি ১০ লাখ ডলারের অ্যাকাউন্ট আছে।’

তিনি আরও জানান, ‘বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট আগা হাসান আলী ১৯৮৮ সালে নাকভিকে নির্দেশ দেন কেইমেন দ্বীপে বিসিসিআইয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিআইসি ওভারসিজে এরশাদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে। ওই অ্যাকাউন্টে রওশন এরশাদের নামও ছিল। স্থানান্তরিত অ্যাকাউন্টে এরশাদের অর্থ তখন সুদসহ বেড়ে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। এ অ্যাকাউন্ট থেকেই এরশাদের স্ত্রী বলে কথিত মেরি মমতাজকে দুই কিস্তিতে এক কোটি ডলার দেওয়া হয়েছিল। (সূত্র: কার রাজনীতি, কীসের রাজনীতি; মতিউর রহমান, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, ২০০৪, পৃষ্ঠা ২৮৮।)’

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, রাডার ক্রয় সংক্রান্ত মামলা থেকে খালাসের মধ্য দিয়ে এরশাদ ও জাতীয় পার্টি উভয়ই চাঙ্গা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অপরিচিত ধর্মভিত্তিক সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় মহাজোট গঠনের চেষ্টা করছেন এরশাদ। পাশাপাশি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই নিজের নেতৃত্বধীন এই জোটের আত্মপ্রকাশও ঘটাতে চান তিনি। এক্ষেত্রে রাডার ক্রয় সংক্রান্ত মামলাটি তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে রেখেছিল।

জানতে চাইলে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘স্যারের খালাসের খবরে শুধু আমি না, বাংলাদেশে ৬৮ হাজার গ্রামের মানুষ আনন্দিত হয়েছে। দীর্ঘদিন মামলা চললেও সত্যের বিজয় হয়েছে। এই মামলা থেকে খালাসের মধ্যদিয়ে জাপা আরও একবার চাঙ্গা হলো। আগামী দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’

কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সোলায়মান সামি বলেন, ‘স্যারের খালাসে জাতীয় পার্টি আবার ঘুরে দাঁড়াবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top