সকল মেনু

আজ কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকারের রায়

হটনিউজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালকিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হোসেন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আজ বুধবার (১৯ এপ্রিল)। এই দুই আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয় অভিযোগ রয়েছে। বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই দু’জনের বিরুদ্ধে রায় দেবেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার দুই আসামি হলেন মো. মোসলেম প্রধান (৬৬) ও সৈয়দ মো. হোসেন (৫৪)। মোসলেম প্রধান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও মো. হোসেন পলাতক রয়েছেন। এর আগে গত ৭ মার্চ এই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখিছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
আদালত মামলাটি সিএভি রাখার পর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেছিলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে মোসলেম প্রধানকে তিনটি ও সৈয়দ হোসেনকে ছয়টি অভিযোগেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় আমরা ধর্ষণ ও ধর্মান্তকরণকে গণহত্যার সমতুল্য হিসেবে ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আর্জি জানিয়েছি। সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত বিভিন্ন বিচারের নজির তুলে ধরেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডই হবে একমাত্র শাস্তি। সে কথাও আমরা আদালতে বলেছি।’
এই দু’জন রাজাকার ছিলেন না দাবি করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘মোসলেম প্রধান একজন কৃষক এবং সৈয়দ মো. হোসেন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। এজন্য আমরা আদালতে তাদের খালাস চেয়েছি।’
এই দু’জনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৯ মে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যেই এই বিচার শেষে মামলাটি সিএভি রাখেন আদালত।
তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে মোট ঘটনা ছয়টি। এর মধ্যে ৬২ জনকে হত্যা এবং ১১ জনকে অপহরণ ও আটক ছাড়াও আড়াইশ বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
ছয় অভিযোগ
মামলার প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় আসামী হোসেন ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চার জনকে নির্যাতন করে।
দ্বিতীয় অভিযোগটি দু’জনের বিরুদ্ধেই। এই অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২ সেপ্টম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে সৈয়দ হোসেন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে নিকলী বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলাকায় কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন করা হয়।
তৃতীয় অভিযোগে নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং আড়াইশ বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের উল্লেখ আছে।
চতুর্থ অভিযোগটি হোসেনের বিরুদ্ধে। এতে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলীর নানশ্রী গ্রামে তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ হোসেন ও মোসলেম দু’জনের বিরুদ্ধেই। এ অভিযোগ অনুযায়ী, একাত্তর সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেককে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
সর্বশেষ ও ষষ্ঠ অভিযোগে উল্লেখ আছে, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ রাজাকার হোসেন কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়ায় রিকশা দিয়ে ঘুরানো ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বীভৎসতার প্রমাণ রেখেছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top