সকল মেনু

ট্যানারি শ্রমিকরা মালিকদের ইন্ধনে কর্মসূচির ফাঁদে

হটনিউজ ডেস্ক: ট্যানারি মালিক ও শ্রমিক সমিতির সমাবেশরাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি কারখানা সাভারে স্থানান্তরের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর সরকার এ আদেশ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে কারখানাগুলো থেকে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এরপর থেকেই আন্দোলন করছেন ট্যানারি কারখানার মালিক-শ্রমিকরা। জানা গেছে, মালিকদের ইন্ধনেই বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছেন শ্রমিকরা। মালিকরা শ্রমিকদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ সমস্ত ক্ষতিপূরণের দায় থেকে মুক্ত হতে মালিকরা এ ধরনের কৌশল এটেছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিক-মালিকের ৯ দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার সকালে রাজধানীর হাজারিবাগে ট্যানারি মোড়ে হাজার হাজার শ্রমিক ও কয়েকজন মালিক কালো পতাকা মিছিল বের করেন। মিছিলে নারী শ্রমিকদেরও দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ মালিকই কর্মসূচিতে অংশ নেননি।

শ্রমিকরা মিছিলে অংশ নিয়ে স্লোগান তুলে সরকারের উদ্দেশ্য বলেছেন, তাদের ৯ দফা দাবি মানতেই হবে। সাভারের কারখানায় শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে সাভার কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ দিতে হবে। এছাড়া তাদের বেতন ভাতাসহ সমস্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এসময় মিছিল নিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক ঝিকাতলা ঘুরে আবার ট্যানারি মোড়ে জড়ো হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় রফতানি আয় অর্জনকারী চামড়া শিল্প ধ্বংসের পেছনে তো আমরা দায়ী নই, দায়ী সরকার। আমরা তো সাভারে যেতেই চেয়েছি। কিন্তু ষড়যন্ত্র করেছে বিসিক ও কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন। উৎপাদন বন্ধ থাকলে রফতানিও বন্ধ থাকবে, ফলে আয়ও বন্ধ থাকবে। তাহলে শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেবো? শ্রমিকদের বেতন সরকারকেই দিতে হবে।’

ট্যানারি মালিক ও শ্রমিকদের কালো পতাকা মিছিলএদিকে এসময় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আমরা তো মালিকের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা। কারণ আমরা তাদের কারখানায় চাকরি করি। কিন্তু আমরা জানি এ বিষয়ে মালিকরাই ভুল করেছেন। কারণ সরকার ট্যানারি কারখানা যতবারই সরাতে চাইছে মালিকরা তাতবারই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তারা এক প্রকার জোর করেই হাজারীবাগে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত ছিল, যেখানে সরকার চাইছে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে, সেখানে মালিকরা কেন সেটাকে পাত্তা দেয়নি? তাহলে এ দায় কার? মালিকের কারণেই আজ আমরা খেটে খাওয়া মানুষ এর ভুক্তভোগী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, আমরা কর্মচারি, মালিকের চাকরি করি। আমরা তো সরকারি চাকরি করিনা, যে সরকার বেতন-ভাতা দেবে। আমাদের বেতন ভাতা মালিকদেরকেই দিতে হবে। তাছাড়া মালিকদের জরিমানার টাকাও সরকার মওকুফ করে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় কালো পতাকা নিয়ে নেমেছি। কারণ মালিকরাই আমাদের রাস্তায় নামতে বলেছেন। তারা বলেছেন রাস্তায় না নামলে দাবি আদায় হবেনা।’

ট্যানারি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা আমরা আজ ভুক্তভোগী। এর দায় সরকার ও মালিক দুপক্ষেরই ‘

এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেন না, সমস্যা আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে হাজার হাজার শ্রমিক মিছিলে উপস্থিত থাকলেও মালিকদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। এদের মধ্যে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন না। তাকে বুধবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম তাই মিছিলে যেতে পারিনি।’

শ্রমকিদের অভিযোগ ও তাদের বেতন-ভাতা দেবেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো চামড়া শিল্পই আজ স্তব্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন নেই। তাহলে আমরা শ্রমিকদের বেতন কীভাবে দেবো?’

শ্রমিকদের এক/দুই মাসের বেতন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সাভার প্রস্তুত করতে করতে এক বছর সময় নেয় তাহলে আমরা তো এক বছর শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে পারবো না। হয়ত এক/দুই মাসের বেতন দিতে পারি। এছাড়া ব্যাংকও আমাদের এখন ঋণ দেবেনা। তাহলে আমরা এখন কোথায় যাবো?’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top