সকল মেনু

এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু প্রশ্নফাঁসের চ্যালেঞ্জের মুখেই

 রাকিবুল ইসলাম রাকিব: প্রশ্নপত্র ফাঁসের চ্যালেঞ্জের মুখে আজ  রবিবার (২ এপ্রিল) থেকে শুরু এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এ বিষয়ে কোনও রকম ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এমনকি এ অপকর্ম থেকে যেসব শিক্ষক সরে আসবেন না তাদের পেশা থেকে বিদায় জানানোর কথাও বলেন তিনি। আর পরীক্ষা সংক্রান্ত্র আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রশ্নঁফাসকারি ফেসবুকের ২৫টি গ্রুপ চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের আশাবাদও শুনিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম। এত কিছুর পরও ফেসবুক থেকে প্রশ্ন সংগ্রহকারী পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণাও দিতে হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহবার হোসাইনকে।

তবে এসব আয়োজন থাকলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা। শুক্রবার (৩১ মার্চ) ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাবো কী করে’শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ডিজিটাল পদ্ধতি (ইনবিল্ট)ব্যবহার করে পরীক্ষা নিতে হবে। তা ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যাবে না। প্রশ্নফাঁসের ব্যবসা ও বাজার ঠেকাতে এই শিক্ষক চার/পাঁচ সেট প্রশ্নপত্র তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন।

এখন দেখার বিষয় রবিবার থেকে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় শেষ রক্ষা হয় কিনা?  বিগত সময়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নেই। বিজিপ্রেসে থেকেও প্রশ্নফাঁস বন্ধ হয়েছে।গত দুই-তিন বছর প্রশ্নফাঁস হয়নি। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু গত এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষকরা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এমন এক পরিস্থিতি যা, সহ্যও করতে পারছি না, হজমও করতে পারছি না। আবার বলতেও পারছি না।’

এ পরিস্থিতিতে গত ২০ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘কোনও শিক্ষক জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’স্বেচ্ছায় পেশা থেকে বিদায় নেওয়ারও আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এদিকে শিক্ষা সংক্রান্ত্র আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গত দুই মাসে দুইজন অধ্যক্ষ, তিনজন শিক্ষকসহ মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের একটি গ্রুপে ২৫ হাজার সদস্য রয়েছে। একটিতে ৯ হাজার ও আরেকটিতে ১৬ হাজার সদস্যের মধ্যে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও ছাত্রও রয়েছেন।’ এদের দু-একদিনের মধ্যে গ্রেফতার করার আশ্বাসও দেন পুলিশের এই উপ-কমিশনার।

তবে শনিবার পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যা পর্যন্তও ফেসবুক গ্রুপে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। ওইদিন অবশ্য গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার বৈঠকে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষাকে সামনে রেখে ফেসবুক গ্রুপসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় অবজার্ভেশন চলছে।

এর আগে গত এসএসসি পরীক্ষায় হোয়াটস অ্যপেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়নি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির ওই সভায়। গোয়েন্দা পুলিশের এ তথ্য দেওয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জানিয়েছিলেন, ‘যারা ফেসবুক গ্রুপগুলোর অ্যাডমিন বা এর সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের কেউ প্রশ্ন্ সংগ্রহ করে পরীক্ষা দেন, আগামীতে যদি এমন প্রমাণ পাই, তাহলে তাদেরটা পরীক্ষা বাতিল করতে চাই। যারা প্রশ্নফাঁসে প্রলুদ্ধ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে মন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যের পরও বিশেষজ্ঞরা ভরসা রাখতে পারেনি। তারা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের চ্যালেঞ্জের্ মুখেই এবার শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top