সকল মেনু

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য: আইপিইউ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

হটনিউজ ডেস্ক: ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিরা এই সম্মেলন থেকে গৃহীত পরিকল্পনা নিজ নিজ দেশে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে বিশ্বকে শান্তি, উন্নতি ও প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য পূরণে আপনারা যে পরিশ্রম করছেন, তা সফল হবে। আপনাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।’
শনিবার (১ এপ্রিল ) সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে আইপিইউয়ের ১৩৬তম সম্মেলন আয়োজনের ঘটনাকে দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সংসদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮৬ সালে আমি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আইপিইউ সম্মেলনে অংশ নিয়েছি। এই সম্মেলনকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। কারণ গণতন্ত্র কেবল কোনও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয়, এটা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি মাধ্যম। আইপিইউ সম্মেলন গণতন্ত্রের এই উদ্দেশ্য পূরণে ভূমিকা রাখে।’
আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা ও অপুষ্টি। বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুরা পুষ্টির অভাবে পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু অন্যদিকে বিশ্বে একদল মানুষ প্রাচুর্যের মধ্যে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দরকার একটু সহযোগিতা। পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সবাই এগিয়ে এলে বিশ্বকে এক মুহূর্তে ক্ষুধামুক্ত করা সম্ভব।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের একটি বড় ধরনের সমস্যা হলো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। এগুলো মানুষের শান্তি নষ্ট করছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এখন নির্দিষ্ট কোনও দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও অনেক দূর যাওয়া। আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

আইপিইউ সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অ্যাসেমব্লিতে সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই সম্মেলন থেকে আপনারা মানবতার কল্যাণে পরিকল্পনা নেবেন, নিজ নিজ দেশে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন। আমাদের লক্ষ্য পূরণে আপনারা যে পরিশ্রম করছেন, তা সফল হবে। আপনাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।’

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে শিরিন শারমিন চৌধুরী ও আইপিইউয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাবের হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচিত করায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টারিয়ানদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। আইপিইউয়ের ১৩৬তম সম্মেলনের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার জন্যও সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী সম্মেলনে আগত সব দেশের জনপ্রতিনিধিসহ পর্যবেক্ষকদের ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি এই সম্মেলনে আতিথেয়তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি, আর্থিক সেবায় মানুষের অংশগ্রহণের মতো বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। দেশের মেয়েদের জন্য স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে। দশ বছর আগে দেশের খুব অল্প মানুষ মোবাইল ব্যবহার করত। এখন দেশের প্রায় সব মানুষের হাতেই মোবাইল পৌঁছে গেছে। এ সময়ে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫ লাখ থেকে সাড়ে ছয় কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের এসব অর্জন বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।’

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গ টেনে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নের এক রোল মডেল বাংলাদেশ। আজকের সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদের বিরোধী দলের নেতা সবাই নারী। এমন একটি দেশে আইপিইউয়ের সম্মেলন এই প্রথম।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আইপিইউয়ের মহাসচিব ক্যামেরনের মার্টিন চুংঅং।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top