সকল মেনু

‘লোন উলফ’-এর হামলা?

রাকবুল ইসলাম : রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে ‘লোন উলফ’ হামলা হয়েছে। হামলার ধরন দেখে জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা এমনটাই মনে করছেন। তাদের ধারণা, ধারাবাহিক অভিযানের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এ কারণে একাধিক লোকজনের বদলে ‘লোন উলফ’ বা ‘সিঙ্গেল অ্যাটাকে’র মতো হামলা চালানো শুরু করেছে জঙ্গিরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিদের হামলার নতুন এই ‘ট্রেন্ড’ ভয়ঙ্কর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এ ধরনের হামলা ঠেকানোও অনেক কঠিন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বজুড়েই জঙ্গি হামলার ধরন পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদের পরিভাষায় লোন উলফ বা সিঙ্গেল অ্যাটাকের ঘটনা ঘটছে বেশি। বাংলাদেশের ‘হোম গ্রোন’ জঙ্গিরাও এই ট্রেন্ড বেছে নিয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর আহমদিয়া জামে মসজিদে ‘লোন উলফ’ হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লোন উলফ হামলার অর্থ হলো একা একজন ব্যক্তির ‘টার্গেটেড’ কোনও স্থানে গিয়ে আত্মঘাতী হামলা করা। এ ধরনের হামলার কারণে হামলাকারী জীবিত না থাকায় তার কাছ থেকে কোনও তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। লোন উলফ হামলাকারী একা টার্গেটেড স্থানে যাওয়ার কারণে মানুষের সন্দেহও কম হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোন উলফ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গি বিরোধী ধারাবাহিক অভিযানের কারণে জঙ্গিদের দলবদ্ধ হয়ে কোনও আস্তানায় অবস্থান করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেবল এনক্রিপ্টেড মেসেঞ্জার অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়ে থাকে। এ কারণে একজন লোন উলফ জঙ্গি নিজের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থেকেও গোপনে-গোপনে হামলার  প্রস্তুতি নিতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, সংঘবদ্ধ জঙ্গিদের চেয়ে লোন উলফ-এর সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন। তবে সংঘবদ্ধ জঙ্গিদের মধ্যেও এখন ‘কম জানো, নিরাপদে থাকো’ এই তত্ত্ব অনুসরণের প্রবণতা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে গ্রেফতার হওয়া অনেক জঙ্গি।

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম  বলেন, ‘বিশ্ব জুড়েই টেরোরিস্টদের হামলার ধরন পাল্টাচ্ছে। টেরোরিস্ট হামলার ট্যাকটিকসের পরিবর্তন এসেছে। তাদের ট্রাক কিংবা অন্য ধরনের গাড়ি নিয়ে হামলা করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। লোন অ্যাক্টর বা লোন উলফ অ্যাটাকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আগামীতে এটা এফেক্টিভলি কন্ট্রোল করা না গেলে তারা এই ধরনের হামলা করতে পারে।’

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন  বলেন, ‘জঙ্গিদের এই ট্রেন্ড খুবই ভয়ঙ্কর। এটা সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য অনেক খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করবে। আত্মঘাতী হামলা আগেও হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৫ সালে এমন দুটি ঘটনা ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে আত্মঘাতী হামলা দেখা যাচ্ছে, সেগুলো অনেক বেশি ডেসট্রাক্টিভ।’ তিনি আরও বলেন, ‘র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরের ভেতরে ঢুকে যাওয়া মানে অনেক বেশি আতঙ্কের বিষয়। মনে হচ্ছে জঙ্গিরা আরও অনেক স্পর্শকাতর স্থানে হামলার পরিকল্পনা করে বসে আছে। এসব ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে আশকোনায় র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে দেয়াল টপকে প্রবেশ করে এক যুবক আত্মঘাতী হামলা চালায়। বোমা বিস্ফোরণে শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে মারা যায় হামলাকারী। এতে দুজন র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, হামলাকারী জঙ্গি দলের সদস্য। তবে কোন দলের, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top