সকল মেনু

মেঘ বাবা-মার খুনিদের বিচার চায়

আরমান,হটনিউজ২৪বিডি.কম: পাঁচ বছর আগে বাবা-মাকে হারিয়েছে ছোট্ট মাহিন সরওয়ার মেঘ। তখন শুধু বুঝতো বাবা-মা আর ফিরবে না। এখন ও অনেক বুঝতে শিখেছে। প্রতি মুহূর্তে বাবা-মা’র অভাববোধ করে। অনেক কিছু ভুলে গেলেও বাবা-মা’র সঙ্গে জার্মানিতে গিয়ে আইসক্রিম খাওয়া এখনো মিস করে মেঘ। ১০ বছরের মেঘ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক। আগে মসজিদে গিয়ে দুহাত তুলে আল্লাহকে বলতো যেন ওইসব চোররা ধরা পড়ে। তবে সেই মেঘ এখন তার বাবা-মা’র খুনিদের বিচার চায়।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের নানীর বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র ছেলে মেঘের সঙ্গে কথা বলেন জাগো নিউজের প্রতিবেদকেরা। মেঘ জানতো তার ইন্টারভিউটি তার বাবা-মা’কে নিয়ে। প্রতিবেদকদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বললেও বাবা-মা’র বিষয়ে নিজ থেকে কিছু বলছিল না সে। তবে মুখে না বললেও অঙ্গ ভঙ্গিতে ঠিকই তার জীবনে বাবা-মা’র অপূর্ণতা প্রকাশ পাচ্ছিল।

মেঘের কাছে জানতে চাওয়া হয় বাবা-মা থাকলে তাদের কাছে কি চাওয়ার থাকতো? উত্তর মেঘ বলে, যদি আব্বু-আম্মু বেঁচে থাকতো আমার একটি পিএস-ফোর গেমস থাকতো, ফেরারি থাকতো, লাম্বুরগিনি থাকতো। তাদের কাছে পিটবুল কুকুর চাইতাম।

বাবা-মা’র কোন কথাটি মনে বেশি মনে পড়ে? সে সময়কার সাড়ে ৫ বছরের শিশুর এ কথা মনে না থাকাই ছিল স্বাভাবিক। তবে মেঘ উত্তর দিলেন, ‘আব্বু-আম্মুর সঙ্গে জার্মানিতে ম্যাকডোনাল্ডসে খেয়েছিলাম, এরপর বাসায় ফিরে টিভি দেখেছি, আইসক্রিম খেয়েছি। এগুলো মনে আছে।

বড় হয়ে কি হতে চায় ছোট্ট মেঘ? জানতে চাইলে বলেন, ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা আমার। সাকিব-আল-হাসান আর মুস্তাফিজের খেলা খুব ভালো লাগে। আমি বোলিং করতে পছন্দ করি। আজ সকালে ছাদে এক আঙ্কেলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। ৪টা বল করেছি, আঙ্কেল একটাও খেলতে পারেনি।

পড়াশুনা আর খেলাধুলা নিয়ে সপ্তাহে ছয়দিনই ব্যস্ত থাকে মেঘ। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালের (বিআইটি) চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় স্কুলের জন্য রেডি হয় সে। স্কুল চলে ৯টা থেকে ২টা ১০ পর্যন্ত।

স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কম্পিউটারে ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স গেম খেলে মেঘ। মাঝে মাঝে বিকেলে ছাদে ক্রিকেট খেলে আর দুই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়েই দিন কাটে তার। সময় পেলে মাঝে মাঝে বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের বাড়িতে ঘুরতে যায়।

পড়াশুনা করতে কেমন লাগে? মেঘের উত্তর, খুব ভালো। ইংরেজি আর অংক করতে খুব ভালো লাগে। ইংরেজি গল্প পড়তে বেশি ভালো লাগে। অংক প্রতিযোগিতায় তিনবার ফার্স্ট হয়েছি।

মেঘের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কে? উত্তর বলেন, মামা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। মামার সঙ্গে ক্যাশ অব ক্ল্যান্স খেলি। একসঙ্গে ঘুরতে যাই। মামাই সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু মামা মাঝে মাঝে আবার একটু বকাও দেয়।

মেঘের মামা নওশের আলম রোমান। তিনি এই হত্যার মামলার বাদী। বাবা-মা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে রাতে এই মামার সঙ্গেই ঘুমায় মেঘ।

শিশু মেঘকে তার বাবা-মা’র হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি। তার মামার সঙ্গে যখন কথা বলতে চাই তখন তিনি মেঘকে অন্য ঘরে পাঠিয়ে দেন। মুখে কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে ঘর ত্যাগ করে মেঘ।

শুক্রবার তাই গোসল করে নামাজে যাবে। আগামীকাল বাবা-মা’র কবর জিয়ারত করবে। বাড়িতে দোয়া মাহফিলে অংশ নেবে। আরও অনেক কাজ মেঘের।

ছোট্ট মেঘকে নিয়ে একটা আশংকার অবশ্য রয়েছে। মেঘ সমবয়সীদের থেকে একটু ভিন্ন ও ম্যাচিউর। বাবা-মা হত্যার বিচার না পাওয়া তার ভবিষ্যৎ জীবনে কেমন প্রভাব ফেলে সেটা নিয়ে শঙ্কিত তার পরিবারের সদস্যরা।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ভোরে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top