সকল মেনু

মুসলিম নিষেধাজ্ঞা: আপিল আদালতের রায় ট্রাম্পের বিপক্ষে যাওয়ার ইঙ্গিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিয়াটলের ফেডারেল আদালতের ধারাবাহিকতায় এবার সান ফ্রান্সিসকো-র আদালতের রায়ও মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিয়াটলের পর সান ফ্রান্সিসকো-তে দ্বিতীয় দফায় ধরাশায়ী হতে পারেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কদিন আগেই স্থগিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জেমস রবার্ট। সিয়াটলের আদালতে দেওয়া তার ওই স্থগিতাদেশের পর সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক নাইনথ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিলস-এর শরণাপন্ন হয় ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এ মুহূর্তে আদালতপাড়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি ট্রাম্পের প্রতিকূলে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রথম রায় এসেছিল ৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সান ফ্রান্সিসকো-র আদালতে আপিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। চলতি সপ্তাহেই আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া-র আইন বিভাগের অধ্যাপক ররি লিটল।

অধ্যাপক ররি লিটল বলেন, তার বিশ্বাস মামলায় জেতার জন্য উভয় পক্ষেরই জোরালো যুক্তি রয়েছে। কিন্তু যখন নাগরিকদের অপূরণীয় ক্ষতির প্রশ্ন আসে; তখন বিষয়টি আদতে এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেই যায়। অর্থাৎ, ইতোপূর্বে এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে আদালতের পর্যালোচনা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তাকে গর্হিত কাজ বলে মন্তব্য করেন ররি লিটল। তিনি বলেন, “অবিশ্বাস্যভাবে বিভ্রান্তিকর যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। এটা সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্যের যে কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।”

বহুল আলোচিত এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মঙ্গলবার ফেডারেল আদালতে শুনানি চলাকালে তুমুল হট্টগোল হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের আইনজীবীদেরকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন তিন বিচারপতি। সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক নাইনথ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে ১৫ পৃষ্ঠার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগ। এতে এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার আইনসম্মত ব্যবহার’ বলে দাবি করা হয়।

এখন সান ফ্রান্সিসকো-র আদালতে এ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দেওয়া বিচারক জেমস রবার্ট-এর রায় স্থগিত করা হলে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ টিকে যাবে। অর্থাৎ, মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর ফলে পুনরায় ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের শরণাপন্ন হতে পারবে ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা অঙ্গরাজ্য। বিচারক জেমস রবার্ট-এর আদেশ স্থগিতের বিপক্ষে রায় আসার মানে হচ্ছে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। সান ফ্রান্সিসকো-র আদালত যদি ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রায় দেন তাহলে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হতে পারবে ট্রাম্প প্রশাসন।

মুসলিম নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি

স্বভাবতই ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার পক্ষে শুরু থেকে সাফাই গাইছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্প শিবিরের দাবি, অভিবাসন এবং জাতীয় নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলোতে প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্বাধীন। মার্কিন কংগ্রেসই কেবল এখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের বিশেষ উপদেষ্টা অগাস্ট ফ্লেন্টজে-র ভাষায়, কংগ্রেসের ক্ষমতা স্পষ্টতই সাংবিধানিক।

অগাস্ট ফ্লেন্টজে-র কাছে আদালত জানতে চান, “আপনি কি এই যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার ঊর্ধে?” এ প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণ থেমে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন অগাস্ট ফ্লেন্টজে। এ সময় তিনি বলেন, কিছু মামলা পর্যালোচনার ব্যপারে ‘সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা’ রয়েছে।

মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিরোধীরা যা বলছেন

ট্রাম্প প্রশাসনের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিরোধীরা বলছেন, সিয়াটলের ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস রবার্ট এ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দেওয়ার পর এখন পুনরায় সেটি কার্যকর করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।

ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা রাজ্যের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল নোয়া পারসেল আদালতকে বলেন, “এর ফলে পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্যক্তিরা বিদেশ (অভিবাসীদের নিজ দেশ) সফরে অসমর্থ হয়ে পড়বেন। এর ফলে ট্যাক্স থেকে প্রাপ্ত আয় কমে যাবে।”

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে মুসলিম নিষেধাজ্ঞারও কঠোর সমালোচনা করেছে ওয়াশিংটনের রাজ্য সরকার। তারা বলছে, ট্রাম্পের এমন নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক। কারণ এটা মুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক।

নোয়া পারসেল বলেন, প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধের কথা বলেছেন। এ সময় নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন নোয়া পারসেল।

ট্রাম্পের সহযোগী নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি গিউলিয়ানি-ও সম্প্রতি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেছেন। এ বিষয়গুলোকে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের প্রমাণ বলে আদালতকে জানান সলিসিটর জেনারেল নোয়া পারসেল। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top