সকল মেনু

পুনর্বাসন বিলম্বিত সুন্দরবনের আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের

খুলনা প্রতিনিধি: দস্যু দমনে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে গত ৮ মাসে সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ৯টি বাহিনীর প্রধানসহ ৯২ জন এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে ৪৫ জন জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। তবে এদের পুনর্বাসন এখনও হয়নি। এর জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে চিন্তাভাবনা এখনও চলমান রয়েছে। পাশাপাশি জামিন পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে থাকা দস্যুদের ওপর প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।

র‌্যাব-৮ এর অপারেশন কর্মকর্তা এ এসপি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আত্মসমর্পণকৃত দস্যুদের পুনর্বাসনের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ পরিকল্পনায় রয়েছে। বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত আশানুরুপ কোনও অবস্থান তৈরি হয়নি। পুনর্বাসনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এতে কিছুটা সময় লাগছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।’

র‌্যাব-৮ এর মেজর আদনান কবীর বলেন, ‘জামিনপ্রাপ্তদের ওপর প্রশাসনের সব বাহিনীর পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনেই রয়েছে। মাস্টার বাহিনীর প্রধান মাস্টার এখন চট্টগ্রামে একটি কাজ করছে। সে একটি ভালো কাজ পেতে আগ্রহী। অন্যরাও স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য মানসম্মত কাজ পেতে চায়। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও তাদের এ চাওয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুনর্বাসনে কিছুটা সময় লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রথম আত্মসমর্পনকৃত ৬০ জনকে জনপ্রতি ২০ হাজার করে টাকা এবং প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। এগুলো ছিল টোকেন উপহার। এর সঙ্গে পুনর্বাসনের যোগসূত্র নেই।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও নেওয়া প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হলে অন্য দস্যুদের মধ্যে আত্মসমর্পণের আগ্রহ হারানোর শঙ্কা থেকে যাবে। এছাড়া আত্মসমর্পণ করা দস্যুকে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাহলে অন্য দস্যুদের মধ্যেও উৎসাহ বাড়বে।’

উপকূলীয় উপজেলা কয়রার জেলে আব্দুল্লাহ ও আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, একদিকে দস্যুদের আত্মসমর্পণ চলছে, অন্যদিকে সুন্দরবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জেলে অপহরণের ঘটনাও ঘটে চলেছে। দস্যু খোকাবাবু বাহিনীর ১২ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণের তিনদিনের মাথায় ৩০ নভেম্বর সুন্দরবনে দস্যুতার ঘটনা ঘটে। ওই সময় বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে মুক্তিপণের দাবিতে ৭টি ট্রলারসহ ২০ জেলেকে অপহরণ করে দস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনী। সেই জাহাঙ্গীর বাহিনীও আত্মসমর্পণ করেছে। তবে এখনও সুন্দরবনে নতুন নতুন দস্যু বাহিনী রয়েছে। এদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের সক্রিয় অভিযান অব্যহত রাখা প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীর বাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ

র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত ইলিশ ও শুটকি মৌসুমকে কেন্দ্র করে দস্যুরা ডাকাতি, জেলে অপহরণ এবং অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। তবে দস্যুদের দমনে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স কাজ করছে। র‌্যাবের সদস্যরা এ পর্যন্ত সফল অভিযানে ৮৪০টি অস্ত্র, ২১,৫৮১ রাউন্ড গুলি উদ্ধারসহ ২৭৯ জন দস্যুকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানের মুখে গত বছরের ৩১ মে থেকে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯২ জন ১৯৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ১০ হাজার রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে।

এরমধ্যে গত বছরের ৩১ মে সুন্দরবনের কুখ্যাত দস্যু মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্য ৫২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ৪৫০০ রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর সবাই জামিনে রয়েছে।

এরপর ১৫ জুলাই জলদস্যু মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর ১১ জন সদস্য ২৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০২০ রাউন্ড গোলাবারুদ নিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ দুটি বাহিনীর সবাই জেলহাজতে রয়েছে।

৭ সেপ্টেম্বর শান্ত ও আলম বাহিনীর ১৪ জন ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০৮ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এদের মধ্যে শান্ত বাহিনীর ১০ জন জামিনে রয়েছে।
আলম বাহিনীর প্রধান জেলহাজতে ও অপর তিন সদস্য জামিনে মুক্ত।

১৯ অক্টোবর সাগর বাহিনীর ১৩ জন ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৯৬ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর ৩ জন জেলহাজতে ও ১০ জন জামিনে মুক্ত।

২৭ নভেম্বর খোকাবাবু বাহিনীর ১২ জন ২২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০৩ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর সবাই জামিনে মুক্ত।

গত ৬ জানুয়ারি নোয়া বাহিনীর ১২ জন ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১০৫ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এ বাহিনীর সবাই রয়েছে জেলহাজতে।

সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর বাহিনী প্রধানসহ ২০ জন ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৫০৭ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। এদেরকে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top