সকল মেনু

ওআইসি’র মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

বাংলাদেশে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী

হটনিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন ওইআইসি। বার্মায় রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে তাই জাতিংসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। মিয়ানমার বিষয়ক ওআইসির প্রতিনিধি সৈয়দ হামিদ আলবার বলেছেন, সংঘাত নিরসনে বিশ্ব সংস্থার কাজ করা উচিত। কারণ এটা কোনও অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। বরং এটা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগের কারণ।

বৃহস্পতিবার ওআইসি’র জরুরি সম্মেলন শুরুর আগে সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সবশেষ অবস্থা জানাবেন সৈয়দ হামিদ আলবার। সম্মেলনের আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন যেন আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের এগিয়ে আসা উচিত। আমরা কম্বোডিয়া বা রুয়ান্ডার মতো আরেকটি গণহত্যা দেখতে চাই না। বিশ্ব সম্প্রদায় শুধু দেখছে কি পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছে।’

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিতব্য ওআইসি’র এ সম্মেলনে বিশেষভাবে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সম্মেলন শেষে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফা আমান বলেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে ইতোমধ্যে মানবাধিকার পরিস্থিতির যে চরম অবনতি হয়েছে; সেটি যেন আর না বাড়ে সেই ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারকে অনুরোধ করবে ওআইসি।

নির্যাতনের শিকার হওয়ার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে তাদের এলাকায় ফিরতে পারেন সে ব্যবস্থা করতেও দেশটির প্রতি আহ্বান জানানো হবে।

রোহিঙ্গাদের কাছে যেন বাধাহীনভাবে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায় সেজন্য মালয়েশিয়া মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করবে বলেও জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির ৪১টি সংগঠন। এর মধ্যে নারী অধিকার বিষয়ক সংস্থাসহ মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থাও রয়েছে। বুধবার এক বিবৃতিতে তারা এই আহ্বান জানায়।

এর আগে অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছিল মিয়ানমার সরকার। চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ওই কমিশনের প্রতিবেদনটি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে ‘হাস্যকর’ মনে হয়েছিল। কারণ কমিশন বলেছিল, রোহিঙ্গাদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নাকি সত্য নয়।

মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াংহি লী আরাকান সফর শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের দুটি গ্রামে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর তাণ্ডবের আগের ও পরের

 

গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের নয় সীমান্তরক্ষী নিহতের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের দায়ী করে মিয়ানমার। এরপর থেকেই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার সরকার। সরকারি হিসাবে দেশটিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে নিহত হয়েছেন ৮৬ জন। আর বেসরকারি হিসাবে নিহতের এ সংখ্যা অন্তত ৪০০। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখেও এ বিষয়ে নমনীয় হতে নারাজ শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল। গত নভেম্বরে এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের একটি চিত্র তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দুটি গ্রামে সরকারি সেনাদের তাণ্ডবের আগের ও পরের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। আগে যেখানে ছিল জনবসতি; এখন সেখানে শুধুই পোড়ামাটি।

রাখাইন রাজ্যের এ গ্রাম দুটি হচ্ছে কিয়েত ইয়ো পিন (বামে) এবং ওয়া পিক (ডানে)। কিয়েত ইয়ো পিন গ্রামের প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ। দ্বিতীয় ছবিটি মিয়ানমারের সেনাদের তাণ্ডবের পর গত ১০ নভেম্বর তোলা। ওয়া পিক গ্রামের প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। এ গ্রামের দ্বিতীয় ছবিটি তোলা হয় চলতি বছরের ১০ নভেম্বর। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, গ্রাম দুটি পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলছেন, সেখানে নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের হত্যা করা হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে সরকারি সেনারা। তবে এমন বর্বর নৃশংসতার পরও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন মিয়ানমারের ‘শান্তির দূত’ অং সান সু চি। এমনকি ভোটের রাজনীতিতে উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের সমর্থন পেতে গত নির্বাচনে কোনও মুসলিমকে প্রার্থীও করেননি তিনি। হাজার বছর ধরে আরাকানে বসবাসরত ‘রোহিঙ্গা’ জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ও মানতে রাজি নন সু চি। রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহারেই ঘোর আপত্তি তার। সরকারি নির্দেশনা জারি করে রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করে সু চি’র নেতৃত্বাধীন দলের সরকার। সূত্র: প্রেস টিভি, ডয়চে ভেলে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top