সকল মেনু

বাস্তব কারণেই বাল্য বিবাহ আইনে বিশেষ বিধান: প্রধানমন্ত্রী

c7b20cbf4d020d29a1e42186d0993797-5847fe8508ac3হটনিউজ২৪বিডি.কম : প্রস্তাবিত বাল্য বিবাহ আইনে বাস্তবসম্মত চিন্তা থেকেই বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তবতা বিবেচনা করেই বাল্য বিবাহ আইনটি করছি। এই নিয়ে ঘাবড়ানোর বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে।’ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্ন-উত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আইনটিতে আমরা ‘তবে’ ব্যবহার করলাম কেন, তা নিয়ে যারা বড় বড় কথা বলছেন, তারা গ্রামের বাস্তব অবস্থাটা জানেন না। যারা আজ এই নিয়ে কথা বলছেন, তারা কোনও দিন গ্রামে বাস করেননি। গ্রামের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নন। গ্রামের পারিবারিক মূল সমস্যা সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা নেই। শুধু একবার গেলাম, দেখলাম আর মুখের কথা শুনলাম, তাতে সব কিছু জানা হয়ে যায় না। দিনের পর দিন গ্রামে যদি কেউ বসবাস করে, তাহলেই সেই গ্রামগুলোর পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা জানতে পারে।’

যারা বাল্য বিবাহ আইন নিয়ে খুব উচ্চস্বরে কথা বলছেন, তারা এই বাস্তবতার কথা চিন্তা করছেন না বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিন্তা করছেন না বলেই এভাবে কথা বলতে পারেন। সমাজের প্রতি দায়-দায়িত্ব তাদের খুবই কম। কারণ তারা দু’টো এনজিও করে পয়সা কামান। কিন্তু দায়িত্বটা নেন না। তবে আমি যতদিন সরকারে আছি, মনে করি এটি আমার দায়িত্ব। সমাজের এই সন্তানটাকে একটি স্থান করে দেওয়া। তার জন্য এই বিশেষ বিধান করে দিয়েছি। কারণ এটি অত্যন্ত বাস্তবসন্মত চিন্তা। রাজধানীর চেহারা দেখে গ্রামের সামাজিক অবস্থা জানানো যায় না।’

আইনটি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনও আইন তো রিজিট হতে পারে না। প্রত্যক আইনেই তো বিশেষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রে একটি সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। না হলে সমাজের জন্য অনেক বড় একটা বিপর্যয় নেমে আসবে।’

বিশেষ বিধান রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছি। কিন্তু একটি মেয়ে যদি যেকোনও কারণে ১২/১৩ বা ১৫/১৫ বছরের সময়ে গর্ভবতী হয়ে যায়, তাকে গর্ভপাত করানো গেল না। তাহলে যে শিশুটির জন্ম নেবে, তার অবস্থা কী হবে? তাকে কি সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধ বলে কেউ মেনে নেবে? নেবে না। তাহলে এই বাচ্চাটির ভবিষ্যৎ কী হবে? এ রকম যদি কোনও ঘটনা ঘটে, তাহলে কী হবে? হ্যাঁ যদি গর্ভপাতের বিষয়টি আইনে থাকে তাহলে সমস্যা নেই। গর্ভপাত করিয়ে নেবে। আর যদি না হয়, তাহলে যে মেয়েটি সন্তান জন্ম দিল তার ভবিষ্যৎ কী? আর সন্তানটির ভবিষ্যৎ কী হবে? এই ধরনের কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে সেখানে যদি মা-বাবার মত নিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে যদি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মেয়েটি বেঁচে গেল, তার বাচ্চাটিও বৈধতা পেল।’

ইউরোপের অনেক দেশে বিয়ের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছর রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সব দেশে অল্প বয়স্ক মায়ের সংখ্যা অসংখ্য। সেখানে এটি একটি সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ১২/১৩ বছরের বাচ্চা মেয়েরা মা হয়ে যায়। তারা গর্ভপাত করাতে চায় না। কিন্তু বাচ্চাটা হওয়ার পর ২/৩ বছর লালনপালন করে ওই মেয়ে বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছে ফেলে রেখে চলে যায়। ওই দেশে কিন্তু ওই বাচ্চাটিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে গেলে সন্তানটি বৈধ না অবৈধ সেই প্রশ্ন কেউ করবে না। তার বাবা-মা কে, তাও জানতে চাইবে না। কিন্তু আমাদের দেশে কী হবে? বাপের নাম কী? মায়ের নাম কী?—সব তথ্য দিতে হবে। কেউ ওকে গ্রহণ করেব না। ছেলে হোক, মেয়ে হোক, তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তাকে কেউ চাকরিও দেবে না। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এটা কোনও বিষয় নয়। তারা এটাকে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু আমরা তো গ্রহণ করি না বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি। সন্তানটি যদি মেয়ে হয়, তাকে হয়তো পতিতালয়ে যেতে হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top