সকল মেনু

রাগীব আলী ও তার ছেলের বিচার শুরু

f3472ae1f0afa3fbde41d9ebc725c662-5844780d3ecfdহটনিউজ২৪বিডি.কম : সিলেটে দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা বাগান দখল ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের দুটি মামলায় শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু হয়েছে। রবিবার (৪ নভেম্বর) রাগীব আলী ও তার ছেলের উপস্থিতিতে সিলেটের মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এক হাজার কোটি টাকা অত্মসাতের অভিযোগে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো অভিযোগ গঠন করেন। এসময় রাগীব আলী, ছেলে আবদুল হাই ও দেবোত্তর সম্পত্তির ভুয়া সেবায়েত সাজা দেওয়া মোস্তাক মজিদ কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে চা-বাগান দখলে মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির অভিযোগে রাগীব আলী ও ছেলের বিরুদ্ধে অপর আরেকটি মামলার পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। রাগীব আলীর ছেলে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করা হলে তার পক্ষে আইনজীবীরা পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। স্মারক জালিয়াতি ও তারাপুর চা বাগান দখল ও সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ ডিসেম্বর।

জালিয়াতির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পরিদর্শক দেওয়ান আবুল হোসেন, সিলেটের প্রাক্তন জেলা প্রশাসক এস এম ফয়সল আলম, প্রাক্তন সচিব এমদাদুল হক, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী শাহনাজ পারভিন, শরাফ উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম ও মদনমোহন কলেজের হিসাব রক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা অরিন্দম দত্ত সাক্ষ্য দেন।

আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জালিয়াতির মামলায় ইতোমধ্যে আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ এ মামলায রাগীব আলীসহ অন্য আসামিদের উপস্থিতিতে সাতজন সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।এ মামলায় মোট ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে গত ১২ আগস্ট পালিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ চলে যান রাগীব আলী ও তার ছেলে। গত ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হন রাগীব আলী। ওই দিনই তাকে দেশে পাঠানো হয়। এর আগে গত ১২ নভেম্বর ভারত থেকে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন হয়ে দেশে ফেরার সময় রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই গ্রেফতার হন।

এর আগে দুই আসামির অনুপস্থিতিতেই তারাপুর চা-বাগান দখলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির অভিযোগে রাগীব আলী ও আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। গ্রেফতারের পর আবদুল হাই আইনজীবীদের মাধ্যমে পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারের পর রাগীব আলীকে আদালতে হাজির করা হলে তার পক্ষের আইনজীবীরা জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আজ রবিবার মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন তাকে হাজির করার নির্দেশ দেন। এ মামলায় রাগীব আলী, ছেলে আবদুল হাই ছাড়াও রাগীব আলীর মেয়ে রোজিনা কাদির, মেয়ে জামাই আবদুল কাদির, দেবোত্তর সম্পত্তির ভুয়া সেবায়েত সাজা রাগীব আলীর আত্মীয়সহ ছয়জন অভিযুক্ত। এরমধ্যে রাগীব আলীর মেয়ে ও জামাতা পলাতক। মামলার অপর আসামি তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্ত জামিনে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, সিলেট নগরের পাঠানটুলার উপকণ্ঠে ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। সেখানে তার ও স্ত্রীর নামে মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং কলেজ স্থাপন করেন। হাসপাতাল এলাকার আশপাশের চা-বাগানের জায়গা বিক্রি করেন রাগীব আলী। সেখানে ৭১৫টি প্লটে বাসাবাড়ি রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত ১৯ জানুয়ারি রায়ে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ায় গত ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। রায়ের পরবর্তী নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালসহ সব অবৈধ স্থাপনা স্থাপনা সরাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। গণবিজ্ঞপ্তির ওপর আপত্তি জানিয়ে পাঠানটুলা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের একটি পক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করলে সেটি শুনানির পর্যায়ে রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top