সকল মেনু

ঢাকায় শুরু হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব

bengalfest_46856বিনোদন ॥ হটনিউজ২৪বিডি.কম : রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উৎসবেরসহ আয়োজক স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আয়োজকরা জানান, অসুন্দর আর হিংস্রতাকে শুদ্ধতা দিয়ে ঢেকে দেয়ার প্রয়াসে এবার আয়োজন কারা হয়েছে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব’। উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এ শাস্ত্রীয় সংগীতের এটি পঞ্চম আসর। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব শেষ হবে ২৮ নভেম্বর। প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির ধুনে শেষ হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

উদ্বোধন পর্বের পর মঞ্চে আসেন সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার কণ্ঠশিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী। ‘পদ্মশ্রী’ আর ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবপ্রাপ্ত শিল্পী ‘রাগকোষ’ রাগের খেয়াল দিয়ে শুরু করেন। পরে তিনি পরিবেশন করেন মিশ্র খাম্বাজের ঠুমরি। তার আগে তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, বয়স হয়ে গেছে, গাইতে সমস্যা হয়। আজ আপনাদের জন্য এখানে এসেছি। যতটুকু পারি ততটুকু গাইব। যতদিন চলাফেরা করতে পারব, চেষ্টা করব ঢাকায় আসতে।

তারপর মঞ্চে আসেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী বাবা আলাউদ্দিন খাঁর দৌহিত্র আশিষ খান। ‘থার্ড আই ফিউশন’ নামে একটি ফিউশন দল গড়ে তুলেছেন তিনি। ভোর পর্যন্ত অনুষ্ঠানে তবলা-প-িত বিক্রম ঘোষের বাজনার পর খেয়াল যুগলবন্দি ‘জাসরাঙ্গি’ পরিবেশন করবেন জয়পুরের আত্রৌলি ঘরানার গায়িকা বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপা-ে ও মেওয়াতি ঘরানার প-িত সঞ্জীব ভয়ঙ্কর। তাদের পর মঞ্চে আসবেন বেহালাশিল্পী ড. এল সুব্রহ্ম্যণণ।

এদিকে আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের আসর শুরু হবে বিদূষী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগালের পরিবেশনায়। তারপর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের তবলার ধুন পরিবেশনার পরে খেয়াল পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ। সেদিন থাকছে রাহুল শর্মার সন্তুর পরিবেশনা। সেতার পরিবেশনা করবেন পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়, খেয়াল পরিবেশনায় থাকবেন প-িত উল্লাস কশলকার। ভোররাতে পরিবেশিত হবে প-িত রনু মজুমদারের বাঁশি, ইউ রাজেশের ম্যান্ডোলিন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যাশয়ের তবলার ধুন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি যেসব তরুণের মধ্যে আগ্রহ দানা বাঁধে, তারা কখনও অসুন্দর আর হিংস্র হতে পারে না। বছরজুড়ে জঙ্গি তৎপরতা এবং হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর এ উৎসব নিয়ে যে আয়োজকদের দোলাচল ছিল, তা উঠে আসে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের কথায়। তিনি বলেন, এ উৎসবটি নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে ছিলাম আমরা। সেই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এবারের উৎসব শুরু হল। এটাই বড় আনন্দের সংবাদ। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের সন্তানদের মাঝে বুনে দিতে হবে আমাদের সংস্কৃতির বীজ।

ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, সংস্কৃতি দেশে দেশে জনগণের সেতুবন্ধন রচনা করে। এ উৎসবটি তেমনিভাবে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণকে এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে। আর আয়োজক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, শুদ্ধ সংগীত প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি আমরা শিল্পের সবগুলো শাখা নিয়েই কাজ করছি। বিপথগামী তরুণদের আমরা ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে চাই। হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে তারিক সুজাতের লেখা একটি কবিতা ‘জন্মের আগেই আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন’ আবৃত্তি করে শোনান তিনি।
তাদের বক্তব্েযর কিছুকক্ষণ পরই শর্মিলা বন্দ্েযাপাধ্যায় ও তার দল নৃত্যনন্দনের মণিপুরি আর কত্থক নৃত্য পরিবেশনায় শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী দর্শনের নানা আঙ্গিক উঠে আসে নৃত্যনন্দনের এই প্রযোজনায়। এরপর বাঁশির সুরে বিশ্ব মাতিয়ে বেড়ানো প্রবীণ গোদখি-ি, ‘ইনসিঙ্ক শো’র স্রষ্টা ভারতের মিউজিশিয়ানস ফেডারেশনসের সভাপতি রাতিশ তাগড়ের বেহালার সঙ্গে রামদাস পাল সুরভের তবলা তৈরি করে আরেক আবহ। তাদের পরিবেশনায় ছিল ‘রাগ মারুবিহাগ’ ও ‘হংসধ্বনি’। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এ ৩ দিকপালের সুর-তালের ইন্দ্রজালে শ্রোতারা বন্দি হয়ে পড়লে স্টেডিয়ামে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top