সকল মেনু

খাস জমি জামানত রেখে জনতা ব্যাংকের ঋণ বিতরণ

44c07939fee3e8a8c16529f389e5e143-5835175841c81হটনিউজ২৪বিডি.কম : লিজ নেওয়া খাস জমি জামানত রেখে ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ওয়ান ডেনিম মিলস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে। লিজ নেওয়া সম্পত্তি জামানত দেওয়ার বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের অনুমতিপত্রও ব্যাংকের নথিতে পাওয়া যায়নি। এদিকে ঋণ নিলেও গ্রহীতা ওই প্রকল্প চালু করতে পারেননি। এখন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৩৭ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ৪৮ টাকা আদায়ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অর্থ মন্ত্রমণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নিয়ে আলোচনায় এ সব তথ্য উঠে আসে।

জানা গেছে, ওয়ান ডেনিম মিলস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দীন আল মামুন। ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হয়ে তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের মামলায় তার ৭ বছরের সাজা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য একেএম মাঈদুল ইসলাম, আব্দুস শহীদ, মোসলেম উদ্দিন, পঞ্চানন বিশ্বাস, রুস্তম আলী ফরাজী, শামসুল হক টুকু ও মইন উদ্দীন খান বাদল।

বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, জনতা ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখা থেকে ওয়ান ডেনিম মিলস লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে ডেনিম কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রকল্প ঋণ দিতে সাতটি ব্যাংক কনসোর্টিয়ামভুক্ত হয়। এতে জনতা ব্যাংক ঋণের আট কোটি টাকা বিনিয়োগসহ লিড ব্যাংকের দায়িত্ব পালনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিবদ্ধ অন্য ছয়টি ব্যাংকের অনুপাত অনুসারে টাকা পাওয়ার আগেই জনতা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খুলে ঋণপত্রের স্বীকৃতি দেয়। ডকুমেন্ট আসার পর সহযোগী ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রিমিয়িার ব্যাংক চুক্তির সম্পূর্ণ অংশ এবং অন্য দু’টি ব্যাংক চুক্তির আংশিক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে জনতা ব্যাংককে চুক্তির বাইরে বাড়তি ঋণ দিয়ে গ্রাহককে পুরো টাকা ঋণ দেয়।

এতে বলা হয়, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দু’বার পুনঃতফসিলের মাধ্যমে ঋণ আদায়ের সুযোগ দিলেও ট্রানজেকশনের অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২০১০ সালে শ্রেণিকরণ করা হয়। ফলে ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া চিঠি অনুযায়ী প্রকল্প চালু হয়নি। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল বীমা কোম্পানি যন্ত্রপাতির বীমা বাতিল করে। বর্তমানে আমদানি যন্ত্রপাতির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে।

নিরীক্ষা বিভাগ সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের জুনে ঋণটিকে ‘ক্ষতিমান’-এর শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে ঋণের টাকা উদ্ধার করা অনিশ্চিত। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ওয়ান ডেনিমের কাছ থেকে ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।

কার্যপত্রে বলা হয়, চুক্তি ভঙ্গকারী কনসোর্টিয়ামভুক্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। ফলে ব্যাংকের পাওনা ৩৭ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ৪৮ টাকা আদায়ের সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় নিরীক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে খেলাপি ঋণের টাকা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণের অর্থ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য আব্দুস শহীদ হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জমি বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া যায় না। লিজি সম্পত্তি জামানত দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুমতিপত্রও ব্যাংকের নথিতে পাওয়া যায়নি। জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জেনেশুনেই এই কাজ করেছেন।’

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীন জনতা, সোনালী, অগ্রণী, রুপালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে মোট ৪৫টি অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আপত্তির সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৭৯৬ কোটি ০৮ লাখ ৭২ হাজার ২১৫ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top