সকল মেনু

বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।

prodip_fis প্রদীপ কুমার সরকার, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে চরম ভাবে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এই ভরা মৌসুমে যেখানে হাট বাজার গুলো দেশীয় মাছে ভরপুর থাকার কথা সেখানে চাষ করা মাছ ছাড়া কোন মাছই প্রায় পাওয়া যায় না। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে মাছ। বৈচিত্রময় জলজ পরিবেশ আর জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ এক সময় দেশের জলাশয়গুলো ছিল প্রাকৃতিভাবে বেড়ে ওঠা অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছের ভান্ডার। এক সময় আমাদের দেশের নদনদী খালবিল হাওড় বাওড় বিলঝিল প্লাবন ভূমি ছিল মাছে ভরপুর। জলাশয় গুলোতে পর্যাক্ত জল থাকায় মাছে প্রজনন ও অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র ছিল প্রশস্থ। তাই মাছের বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জলাশয়গুলো প্রাকৃতিক ভাবেই ছিল মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং স্বাদের জন্যও বাংলাদেশের মাছ ছিল বিখ্যাত। উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা আড়িয়ালখার কয়েকটির শাখা নদী। কুমার, বৈঠাখালী নদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বিধৌত করেছে। অপরদিকে উপজেলায় রয়েছে ৩০/৪০টি ছোট বড় হাওড় বিল, ছোট নালা পুকুর যেখানে একসময় দেশীয় মাছে ভরপুর ছিল। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ২০/৩০টি সড়ক গুলোর পাশে খাঁদে বর্ষাকালে জলে পরিপূর্ণ থাকতো। পর্যাপ্ত জল থাকায় দেশীয় মাছে ছিল ভরপুর। উপজেলার উম্মূক্ত জলাশয়গুলোর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এমন জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০/১৫ হাজার মানুষ। কিন্তু জলাশয় গুলো মৎসশূণ্য হওয়ায় দেশীয় মাছের চরম আকাল দেখা দিয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৫০/৬০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এক সময় জলাশয় গুলোতে অহরহই সরপুটি, ভেদা, শোল, গজার, রিটা, চাঁদা, টাকি, আইড়, ফলি, খল্লা, বাইন, টেপা, পুটি, চিতল, শিং, মাগুড়, কালোবাউস, বেলে, টেংরা, দই, ককিলা, প্রভূতি মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই হাট বাজার গুলোতে প্রায় দেশীয় মাছ শুন্য হয়ে পড়েছে। পেশাজীবি জেলেরাও মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অপরদিকে আমিষের পর্যাক্ত চাহিদা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এক সময় উপজেলার বদ্ধজলাশয় এবং ¯্রােতিসীনি জলাশয়গুলোতে প্রচুর পরিমান চিংড়ি সহ দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু জলাশয় গুলোতে বর্তমানে দেশীয় প্রজাতির মাছের একটি পোনাও পাওয়া যায় না। উপজেলা কৃষি অফিসার মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দেশীয় মাছের প্রজাতি বৈচিত্র্যে ক্রমেই বিলুপ্ত অথবা সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজনন, বিচরণক্ষেত্র ও খাদ্যের উৎসস্থল আশংকাজনক হারে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব, দারিদ্রতা, এক শ্রেণীর লোকের লোভ লালসা। দেখা গেছে ৫/৭ বছরে উপজেলার বেশীর ভাগ জলাশয়গুলো ভরাট করে তৈরি হচ্ছে সুউচ্চ দালান কোঠা, ঘরবাড়ি। উপজেলার বিল, বাওড়, নদী, দখল করে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা ঘাট তৈরি করায় নদীর জলপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে উপজেলার মাছের হাটবাজারগুলোতে। সাধারন দেশীয় প্রজাতির মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। মাছে ভাতে বাঙালির রসনা বিলাস এখন গল্পে- …………..বাস্তবে নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top