সকল মেনু

আ.লীগের ১০০ সহ-সম্পাদক যেভাবে হয়েছিল ৫০০

298dea4e4313a4d0ae6aa7b1b115e94d-575cebb21f58eহটনিউজ২৪বিডি.কম : আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের সহযোগী হিসেবে ১৯টি পদে পাঁচজন করে প্রায় একশ’ সহসম্পাদক থাকার কথা। কিন্তু সদ্য বিলুপ্ত কমিটিতে সেই সংখ্যা ছিল শত শত। এই বিপুল সংখ্যক সহসম্পাদকের ব্যাপারে এ বছরের শুরুতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। এবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এ বিষয়ে কঠোরভাবে হস্তক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ফলে এবারের নতুন কমিটিতে গঠনতন্ত্র নির্ধারিত পদের বাইরে সহসম্পাদকের সংখ্যা না বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের সহযোগী হিসেবে পাঁচজন করে সহসম্পাদক থাকবেন। যেহেতু যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলো বিভাগভিত্তিক নয় তাই এ পদগুলোর বিপরীতে কোনও সহসম্পাদক থাকবে না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাদ দিলে ১৯টি বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকীয় পদ রয়েছে আওয়ামী লীগে। একটি সম্পাদকীয় পদে পাঁচজন করে হলে সর্বমোট ৯৫ জন সহসম্পাদক থাকার কথা। কিন্তু, গত কমিটিতে গঠনতন্ত্রকে ডিঙিয়ে প্রায় একশ সহসম্পাদকের পদে দায়িত্ব পেয়েছিলেন শত শত নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, গত কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য দলীয় প্যাড ব্যবহার করে যত্রতত্র নিজেদের পছন্দের লোকদের এই পদগুলো দিয়েছেন। জানা গেছে, সম্পাদকীয় পদে একজন ছিলেন তার বাসায় গেলেই মিলে যেত সহসম্পাদক পদ। গত কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও নিজের পকেটের লোকদের সহসম্পাদক বানিয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সভাপতির অনুমোদনে সহসম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রে গত কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা ৬৭টি সহসম্পাদক পদে অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বাকি পদগুলো পূরণের নামে ওই দুই নেতা নিজেরাই স্বাক্ষর করে বাকি সহসম্পাদকদের পদ দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনেকক্ষেত্রে দলের সাধারণ সম্পাদকেরও স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি।

বিষয়টি স্বীকার করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, গত কমিটিতে কিছু অনিয়ম করে সহসম্পাদক পদে অনেককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার সহসম্পাদকের লাগাম টানা হবে। গঠণতন্ত্র সম্পূর্ণ মানা হবে এবার এক্ষেত্রে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যত্রতত্র সহসম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছিল এটা সত্য। এতে করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে। দলকে অনেক ক্ষেত্রে বদনামের ভাগীদার হতে হয়েছে। তাই সহসম্পাদক পদগুলো নিয়ে এবারের কমিটি অনেক বেশি সিরিয়াস। যাকে খুশি দেওয়া হবে না সহসম্পাদক পদ। গঠনতন্ত্র মেনেই এ পদে নেতা আসবে।

আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহসম্পাদকদের সমালোচনা করে চলতি বছরের শুরুর দিকে তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপকমিটিগুলোতে সহসম্পাদক পদ ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে। পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তিনিই বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক। কিন্তু তারা যে উপকমিটির সহসম্পাদক এটা বলেন না। এই সহসম্পাদকের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অনেকে নিজ জেলায় অনেক হুমকি-ধামকিও মারে। তাই আগামী সম্মেলনে সহসম্পাদকের সংখ্যা একশ’র মধ্যে কমিয়ে আনা হবে।’ এবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় এ বিষয়ে কথা রাখার ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস তিনি।

দেখা গেছে, সহসম্পাদকদের দৌরাত্ম্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবার এমনও দেখা গেছে, শ’ শ’ সহসম্পাদকদের ভিড়ে তারা নিজেরাই পরিচয় দিতে সংকোচবোধ করতেন। দলের বিভিন্ন সভা, সংবাদ সম্মেলনে সহসম্পাদকদের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বসার জায়গা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। টেন্ডার বাণিজ্য, সচিবালয়ে দৌরাত্ম্যও ছিল এসব সহসম্পাদকদের। ফলে নানা জায়গায় দলের বদনামও হয়েছে নামধারী অসংখ্য সহসম্পাদকের জন্যে। এসব কারণে নতুন কমিটিতে এবার সহসম্পাদকের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক।

গত কমিটিতে সহসম্পাদকদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনারও কমতি ছিল না দলের ভেতরে ও বাইরে। তাই এবার সহসম্পাদক পদ নিয়ে বেশ সতর্ক ও সচেতন রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

এরই অংশ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক বৈঠক শেষে নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকের পদ একশ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক পদ সর্বোচ্চ ১০০টি করার যে বিধান রয়েছে এর বাইরে আর একটিও সহসম্পাদক হবে না।’

সহসম্পাদক পদের বিষয়ে যা রয়েছে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ (ক) উপধারায় বলা আছে ‘সভাপতি বিভাগীয় (সম্পাদকীয় বিভাগ) উপকমিটিসমূহ গঠন করিবেন। তিনি প্রত্যেক উপকমিটির জন্য অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহসম্পাদক মনোনীত করবেন।’ আরও বলা হয়েছে ‘সভাপতি উপকমিটিসমূহের কার্যাদি তদারক ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা করিবেন।’

গঠনতন্ত্রের ২৫ (চ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করিয়া উপকমিটি গঠন করিবে। উক্ত উপকমিটি একজন চেয়ারম্যান, একজন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব পাঁচজন সহসম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে। উপকমিটিসমূহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যক্রম জোরদার করার কাজে সহায়তা করিবে। প্রত্যেক বিভাগ উহার কর্মকাণ্ডসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সরবরাহ ও সংরক্ষণ করিবে এবং সময়ে সময়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করিবে। প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার উপকমিটির সভা অনুষ্ঠিত হইবে। সভায় স্ব স্ব উপকমিটি তাহাদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ণ ও করণীয় নির্ধারণ করিবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top