সকল মেনু

খানসামায় উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

unnamedখানসামা দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের খানসামায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভুয়া শিক্ষার্থীর নামে টাকা উত্তোলন ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ পুনরায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে অভিভাবকগণ। সূত্রমতে, ৮ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রদত্ত পুনঃঅভিযোগে জানা যায়, ১৬ জুলাই উপজেলার ৫নং ভাবকী ইউনিয়নের ২৬নং মারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০১৫ সালের জুলাই হতে ডিসেম্বর ৬ মাস এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে জুন ৬ মাসের উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা হয়। এতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন শিক্ষার্থীদের কাউকে কাউকে ৪০০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকা এবং ১২০০ টাকার মধ্যে ৬০০ টাকা প্রদান করেন। তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেহেদি হাসানকে ৯০০ টাকার মধ্যে ৩০০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণির হিমা রায়কে কোন টাকা দেয় নি, চতুর্থ শ্রেণির খাদিজাকে ৭০০ টাকার মধ্যে ৬০০ টাকা এবং দয়ালকে ৪০০ টাকার মধ্যে মাত্র ১০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও কোন কোন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির কোন প্রকার অর্থ প্রদান করা হয়নি। তবে উপবৃত্তি বিবরণ রেজিস্টারে ২০১৫ ও ২০১৬শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নামের পাশাপাশি একাধিক অজ্ঞাত নামও রয়েছে। যারমধ্যে ২০১৫ সালের শিক্ষার্থীদের নামের তালিকাটির অধিকাংশ নামই ভুয়া রয়েছে বলে অভিযোগ এনে গত ২রা আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু ওই অভিযোগের তদন্তে বিষয়টি অন্যধারায় প্রবাহিত হওয়ায় অভিভাবকগণ পুনরায় অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থী অভিভাবদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ওই শিক্ষক ২৮জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ক্লাসে দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করেন। যাদের মধ্যে অনেক ঝরেপড়া শিশুর নামও রয়েছে। এছাড়াও ২০১৫ সালে হাসান আলীকে একই সাথে ২য় ও ৩য় শ্রেণিতে দেখিয়ে ৬০০ টাকা, সিয়ামকে ২য় শ্রেণিতে ২বার এবং ৩য়তে ১বার দেখিয়ে ২০০ টাকা, নাঈমকে ১ম ও ২য় শ্রেণিতে দেখিয়ে ১০০টাকা এবং ওমর ফারুককে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে প্রাক প্রাথমিকে দেখান।

অপরদিকে লিমনকে ২০১৫ সালে ৩য়তে দেখিয়ে ৬০০ টাকা, খালিদ হাসানকে ৩য়তে দেখিয়ে ২০০ টাকা মাহামুদ হাসানকে ২য়তে দেখিয়ে ১০০ টাকা নুর আজিমকে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ৪র্থতে দেখিয়ে ২০০ টাকা, দয়ালকে ২০১৬ সালে ৪র্থতে দেখিয়ে ৩০০ টাকা, হিমা ৩য়তে দেখিয়ে ৩০০ টাকা, লিমনকে ২য়তেদেখিয়ে ২০০ টাকা, আশরাফকে ২য়তে দেখিয়ে ৪০০ টাকা সহ আনোয়ারের ২০০, আশরাফুলের ৫০০, রিপন হাসানের ৩০০, সাপিয়ারের ৬০০, নির্মলের ১০০, মুক্তির ১০০, মরিয়মের ৩০০, রাসেল বাবুর ৩০০, আহাদের ৩০০, লামিসার ৪০০, দুই শিউলীর ৬০০, আরিফুলের ১০০ টাকা নিজের পকেটে রাখেন। তবে এসব নামে উপবৃত্তির টাকা তুলে তাদের নামের উপর ফ্লুট লাগিয়ে অন্য নামের তালিকা শিক্ষা অফিসে জমা দেন বলেও একটি সূত্র জানায়। পরে ঘটনার ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত শিক্ষক আমজাদ হোসেন গত ১৩ আগস্ট রাত আটটায় ওই বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নুর আলম ও অপর একজন সহকারী শিক্ষক সহ দু’জন নেতাকে সাথে নিয়ে মারগাঁও রিয়াজ ডাক্তার পাড়ারসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগকারীদেরকে টাকা ফেরত দিয়ে উল্টা বুঝিয়ে কর্মকর্তাদের দেয়া পরামর্শে কায়দা করে অভিযোগ প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে শিক্ষা অফিসে প্রদান করেন। পরদিন ১৪ আগস্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক বিষয়টির তদন্ত করা হয়।

বর্তমানে অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়টির মোড় ঘুড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা চলায় বাধ্য হয়ে অভিভাবকগণ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পুনরায় লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আমজাদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে আর পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুল ইসলামে সাথে কথা হলে তিনি প্রথম অভিযোগের বিষয়ে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব ছিলো। তবে অভিযোগকারীগণ অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। এদিকে অভিযোগকারী তুলসী রানী, রমজান আলী, জবেদ আলী ও বাবুর সাথে আলাপ হলে তারা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিপদ হবে বলে বোঝাতে থাকেন এবং একটি কাগজে স্বাক্ষর চান। এ সময় তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে স্বাক্ষর দেবেন জানালে ওই শিক্ষকের সাথে থাকা নেতারা জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন। পরে ঘটনার জটিলতা সৃষ্টি হলে অভিভাবকগণ বাধ্য হয়ে আবারও লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন বলে জানান। বারবার অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাজেবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পুনরায় অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top