সকল মেনু

ডেমু ট্রেন কিনে বিপাক পিছু ছাড়ছে না রেলপথ মন্ত্রণালয়ের

indexনিজস্ব প্রতিবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা:  ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডেমু ট্রেন কিনে বিপাক পিছু ছাড়ছে না রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে চীনের এই বিশেষ ট্রেনে।

২০ সেট ট্রেনের মধ্যে অধিকাংশই এখন মেরামত করা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান কারখানাগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিটে ডেমু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত অবকাঠামো নেই। এমনকি দেশের ওয়ার্কশপ ও কারখানাগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিট হিসেবে ডেমু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা স্থাপন করাও সম্ভব নয়। ফলে ৪২৬ কোটি টাকার লোকসানি ডেমু মেরামতে ৩০৮ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কারখানা ও ওয়ার্কশপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে ২০ সেট ডেমু কেনার চুক্তি হয় চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এর সঙ্গে শুল্ক, কর, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণ ও ভাতাও সংযুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রকল্প দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি টাকার।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জোড়াতালি দিয়ে ২০ সেট ডেমুর হালকা ও ভারি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঢাকা ও পার্বতীপুর লোকোশেডে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডেমু সেটের ক্যারেজ অংশের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চট্টগ্রামের পাহাড়তলী‍ ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন কারখানায় কর‍া হচ্ছে।

অন্য কারখানায় ডেমু মেরামত সম্ভব না হওয়ায় আলাদা পূর্ণাঙ্গ ক‍ারখানা স্থাপন করা প্রয়োজন। সেজন্য ‘কন্সট্রাকশন অব এ রিপেয়ার অ্যান্ড মেইনটেনেন্স ওয়ার্কশপ ফর ডেমু’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘ডেমু ট্রেন ভালোমতোই চলছে। কোনো ধরনের সমস্যা নেই। ডেমু ট্রেন মেরামতে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে’।
‘প্রকল্পের আওতায় ডেমু মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ যন্ত্রপাতি কেনা হবে। যেন যথাযথভাবে সঠিক সময়ে অকেজো ডেমু ট্রেন মেরামত করে যাত্রীসেবায় নিয়োজিত করা যায়। ডেমু ট্রেন অপারেটিং সার্ভিস আরও নিরাপদও করবে এ ওয়ার্কশপ’।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘এখনও ডেমু ট্রেনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল আছে। সবগুলো ডেমু ঠিকঠাক মতোই চলছে। তবে মেরামতের জন্য প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই’।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,  অকেজো ও যাত্রী না থাকায় আয়ের বদলে উল্টো লোকসান গুণতে হচ্ছে ডেমু ট্রেনে। ২০১৩ সালে দেশের বিভিন্ন রুটে চালুর দুই বছর না যেতেই ৮ সেট ডেমু ট্রেন বিকল হয়ে পড়ে। সম্প্রতি দুই সেট মেরামত করে চালু করা হয়েছে। ডেমু ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত করার মতো ওয়ার্কশপ ও প্রকৌশলী না থাকায় বাকিগুলো এখনও বিকল। বিকলের পথে অন্য ১২ সেট ডেমুও।

গত এক বছরেই এ ট্রেন লোকসান দিয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। এ সময়ে ১৬ সেট ডেমুতে জ্বালানি ও মেরামত খরচ হয়েছে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। জনবল বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে জোড়াতালি দিয়ে মেরামতে খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অথচ আয় হয়েছে মাত্র  দুই কোটি টাকা।

লাভের আশায় কেনা ডেমু এখন তাই রেলওয়ের গলার কাঁটা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top