সকল মেনু

চাঁদপুরের এক শিশুকে গাজীপুর নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

unnamedশাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নয় বছরের ছোট্ট শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস অভাবের তাড়নায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গাজীপুর যেয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় এলাকায় ফিরে এসেছে। ঢাকার বিমানবন্দর কর্মকর্তা ওমর ফারুক ও তার স্কুল শিক্ষাত্রী স্ত্রী মনি বেগম হেন কোন পদ্ধতি বাকি রাখেনি শিশুটির উপর নির্যাতন চালানোতে। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহারের বদৌলতে মেয়েটির এখন ঠাঁই মিলেছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে। শিশুটির উপর করা নির্যাতনের চিহ্ন না দেখলে বুঝা যাওয়া খুব কষ্টকর হবে যে, মানুস কতটা অমানবিক হতে পারে।
হাইমচর থানার পুলিশ ও শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ সন্তানকে রেখে শিশুটির বাবা অন্যত্র চলে গেছেন। পরে মা ফিরোজা বেগম শিশুটিকে মানুষের বাসায় কাজের জন্য দেন। এক বছর আগে হাইমচরের মোস্তফা সরদার নামের একজন শিশুটিকে গাজীপুরের জয়দেবপুরে জনৈক ওমর ফারুক-মনি বেগম দম্পতির বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে যান। সম্প্রতি শিশুটি বাড়ি যাওয়ার জন্য গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর কাছে আবদার করে। এ কারণে তাঁরা শিশুটিকে প্রচণ্ড মারধর ও নির্যাতন করে। হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দীপন দে বলেন, টাইলসের সঙ্গে মাথা লাগিয়ে নির্যাতন করায় শিশুটির মাথায় বেশ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে গরম খুন্তি ও বিদ্যুতের তারের আঘাতে ক্ষত হয়ে গেছে। তার পুরোপুরি সুস্থ হতে ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে মোস্তফা সরদার শিশুটিকে ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে গাজীপুরের ওই বাড়ি থেকে হাইমচরে নিয়ে যান। পরে শিশুটির অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। আর মোস্তফা সরদারকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর বলেন, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটির প্রতিবেশী হাইমচর এলাকার শাহজাহান ভূঁইয়া বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে শিশু নির্যাতন দমন আইনে হাইমচর থানায় মামলা করেছেন। নির্যাতনের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ওমর ফারুক ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ওমর ফারুক ঢাকা বিমানবন্দরে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রী মনি বেগম একজন স্কুলশিক্ষিকা।
এদিকে শিশুটির উপর নির্যাতনের কথা শুনে পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার হাইমচর যায় এবং তার উপর করা নির্যাতনের চিত্র দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। বর্তমানে সে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাদালের আবাসিক চিকিৎসক আসিবুল আহসান চৌধুরী জানান,  একটি ক্ষত শুকিয়েছেতো আরেকটি দগদগে ক্ষতের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে সে। এছাড়া কিছুটা মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে তার। সুস্থ্য হতে অনেক সময় লাগবে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার জানান, ইতোমধ্যে মনি বেগম ও ওমর ফারুককে ধরতে গাজীপুরে টিম চলে গেছে। পুলিশ মধ্যস্থতাকারী মোস্তফা সরদারকে আটক করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top