সকল মেনু

আগামীকাল শুভ মধু পূর্ণিমা

unnamedঅনুপম বড়ুয়া টিপু, ফ্রান্স প্রতিনিধি: আগামীকাল শুভ মধু পূর্ণিমা।বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য একটি তাৎপর্যময় তিথি। তথাগত বুদ্ধের জীবনের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এই পূর্ণিমার পটভূমিকায় রয়েছে বিধায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের নিকট দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। বুদ্ধ এক সময়ে ভিক্ষু সংঘসহ কোশাম্বী (ভারত) অবস্থান করছিলেন। সেখানে বিনয়ধর ও সুত্রধর নামক দুজন ভিক্ষুর মধ্যে বিনয় সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে উভয় ভিক্ষুর অনুসারীদের মধ্যে সে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং এক পর্যায়ে তা চরম আকার ধারণ করে। বুদ্ধ এ বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু উভয় পক্ষের অনঢ় অবস্থানের কারণে কোন সমাধানে পৌঁছা সম্ভব না হলে বুদ্ধ ভীষণভাবে ব্যথিত হন। পরে বুদ্ধ তাদের ছেড়ে পারিল্যেয় নামক এক বনে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং বর্ষাব্রত পালন শুরু করেন। বনে বর্ষাবাস পালনকালে একটি হাতি প্রতিদিন বুদ্ধের আহার্য হিসেবে ফলমূল আহরণ করে বুদ্ধকে দান দিত। হাতির এ দানকার্য দেখে একটি বানরেরও দান দেয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। সেই মনোবাসনা থেকে ভাদ্র পূর্ণিমার দিন বুদ্ধকে একটি মৌচাক দান করে বানর। কিন্তু মৌচাকে মৌমাছির ছানা ও ডিম থাকায় বুদ্ধ মৌচাক থেকে মধু পান করেননি। বানর ব্যাপারটা বুঝতে পারে এবং মৌচাকটি কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে তা থেকে মৌমাছির ছানা ও ডিম পরিস্কার করে পুনরায় বুদ্ধকে দান করেন। এবার বুদ্ধ মধু পান করেন। এতে বানর খুবই আনন্দিত হয় এবং খুশীতে গাছে গাছে লাফাতে থাকে। এক পর্যায়ে অসাবধানবশতঃ গাছের শাখা থেকে নীচে পড়ে যায়। এতে সাথে সাথে বানরটির মৃত্যু ঘটে। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে এই দানীয় চেতনার উদ্ভব হয়েছিল বলে বানরের ঊর্ধ্বলোকে জন্ম হয় এবং কারো কারো মতে স্বর্গলাভ করে।
ভাদ্র পূর্ণিমায় বানরের মধুদানের ঘটনাকে স্মরণ করে বৌদ্ধরা এই পূর্ণিমায় ভিক্ষুদের মধু দান করেন এবং দানীয় চেতনার বিকাশ ঘটান। এজন্য এই পূর্ণিমা মধু পূর্ণিমা নামে পরিচিত। অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের মতো এদিন সকালে বৌদ্ধধর্মালম্বীরা নতুন জামাকাপড় পড়ে, উত্তম খাদ্যসামগ্রী, ফুল, দ্বীপ, ধূপ এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে বিহারে সমবেত হয়। পিন্ডদানের পাশাপাশি এদিন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বিহারে গিয়ে শীলগ্রহণ ও মধুসহযোগে বুদ্ধপূজা করে। অনেক বিহারে বিকেলেও ভিক্ষুদের মধু দান করে থাকে। প্রতিটি বিহারে সারাদিন ধরে উৎসব, ধর্মালোচনা এবং ধর্মীয় গানের আসর বসে।
আজ সারাদেশের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে এই উৎসব প্রতিপালিত হবে। তম্মধ্যে ঢাকার ধমরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লার কনকস্‌ত্তপ বিহার, আলীশ্বর বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার, কাতালগঞ্জের নবপন্ডিত বিহার, দেবপাহাড়ের পূর্ণাচার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রাম সার্বজনীন বিহার, মোগলটুলির শাক্যমুনি বিহার, চান্দগাঁও সার্বজনীন বিহার, চট্টগ্রাম বন্দর বৌদ্ধ বিহার, হালিশহর নৈরঞ্জনা বৌদ্ধ বিহার, পাথরঘাটা মহাবোধি বিহার, চট্টগ্রাম শাশনশ্রী বৌদ্ধ বিহার, পটিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, পটিয়ার লংকারাম বিহার, ছতর পিটুয়া পূর্নানন্দ বিহার, কর্ত্তালা বেলখাইন সদ্ধর্মালংকার বিহার, পিঙ্গলা সার্বজনীন বিহার, লাখেরা অভয় বিহার, পাঁচরিয়া গন্ধকুটি বিহার, চরকানাই সার্বজনীন রত্নাঙ্কুর বিহার, নাইখাইন সন্তোষালয় বিহার, বোয়ালখালী বৈদ্যপাড়া সার্বজনীন বিহার, কধুরখীল জ্ঞানোদয় ও মারজিন বিহার, শাকপুরা ধর্মানন্দ বিহার, আনোয়ারা তালসরা মুৎসুদ্দিপাড়া বিবেকারাম বিহার, চেনামতি সস্তিদানন্দ বিহার, চন্দনাইশ মধ্যম জোয়ারা সুখরঞ্জন বিহার, পূর্ব জোয়ারা শ্রদ্ধানন্দ বিহার, দক্ষিণ জোয়ারা পরমানন্দ বিহার, সুচিয়া সুখানন্দ বিহার, সাতবাড়িয়া শান্তি বিহার, বেপাড়ীপাড়া রত্নাঙ্কুর বিহার, রাঙ্‌গুনিয়া সৈয়দবাড়ি ধর্মচক্র বিহার, রাউজানের আবুরখীল অজন্তা বিহার, আর্যমৈত্রীয় মহাপরিনির্বাণ বিহার, হোয়ারাপাড়া সুদর্শন বিহার, মধ্যম বিনাজুরি বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর বিহার, আবুরখীল কেন্দ্রীয় বিহার, দক্ষিণ ঢাকাখালী ধমর্রাজ পন্ডিত বিহার, পূর্ব আধারমানিক শ্রদ্ধানন্দ বিহার, রাউজান শান্তিধাম বিহার, হাটহাজারী মির্জাপুর শান্তিধাম বিহার, ফটিকছড়ি কোটেরপাড় ত্রিরত্নাংকুর বিহার, মিরসরাই মায়ানী সুদর্শন বিহার, দমদমা অভয়শরণ বিহার, বাঁশখালী জলদী ধর্মর্রত্ন বিহার, দক্ষিণ জলদী বিবেকারাম বিহার, মহামুনি বিহার, বান্দরবান রাজবিহার, জাদি বিহার, রাঙ্গামাটির বন বিহার, রাজ বিহার, আনন্দ বিহার, খাগড়াছড়ির কল্যাণপুর মৈত্রী বিহার এবং কক্সবাজারের অগ্‌গমেধা বিহার উল্লেখযোগ্য।
ফ্রান্সেও বিভিন্নদেশের বিহার ছাড়াও বুদ্ধগয়া প্রজ্ঞাবিহার ভাবনা কেন্দ্র, বাংলাদেশ সাব’জনীন বৌদ্ধ বিহার,  কুশলায়ন ভাবনা কেন্দ্রে অনুরুপ কম’সুচী গ্রহন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top