সকল মেনু

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত ভোলার কামার শিল্পীরা

unnamedএম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যস্থতা বেড়ে গেছে ভোলার কামার পট্টিতে। রাত দিন চলছে দা, বটি, ছেনি, চুরি চাপাডিসহ নানা সরঞ্জাম তৈরীর কাজ। কারো বসে থাকার সময় নেই, সকলেই যেন ব্যস্থ সময় পার করছেন। তবে লোহার উচ্চ মূল্য আর বিক্রি কমে যাওয়ায় কেউ কেউ লোকসানের আশংকা করছেন। ব্যাংক ও এনজিও থেকে অনেকেই ঋন নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। কেনা বেচা বেড়ে গেলে ঘুরে দাড়াতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, শহরের কালীনাথ রায়ের বাজারে জেলার সবচেয়ে বড় বাজার কামার পট্টি। এখানেই বাপ-দাদার ঐতিহ্যের পেশা ধরে রাখতে কামার কারিগররা দিন-রাত খেটে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বছরের অন্য সময় তেমন কেনা-বেচা না হলেও কোরবানি ঈদ এলেই বেড়ে যায় তাদের ব্যবস্থা।
কামার শিল্পীরা জানান, ঈদকে সামনে রেখেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে চাড়াও মূল্যে লোহা এনে  দা, বটি, ছেনি, চুরি চাপাডিসহ নানা সরঞ্জাম তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। সব কয়টি দোকানে এখন এসব সরঞ্জামের সমারোহ।
কালি নাথ রায়ের বাজারের এক কারিগর বলেন, কামার কারিগরা ভালো নেই, কাজ আছে, ব্যস্ততা আছে কিন্তু ক্রেতা নেই, দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছি।
পবিত্র কর্মকার বলেন, কামারের কাজ করা বাপ-দাদার পেশা। প্রায় ৪০ বছর ধরে এ পেশায় রয়েছি, কিন্তু এখন দিন ভালো যাচ্ছে না। লোহার দাম বৃদ্ধি কিন্তু সে তুলনায় কেনা-বেচা কম।
সঞ্চয় কর্মকার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে গরু কোরবানি দেয়ার সকল সরঞ্জাম পসরা সাজিয়েছি, এখন জম উঠেতে শুরু করেছে।
বাপ্পি জানান, ঈদে কেনা বেচা জমে উঠবে সে আশাতেই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে ভালো মানের লোহা এনে কারিগর দিয়ে নানা ধরনের সরঞ্জাম তৈরী করেছি। ঈদে বেশী বিক্রি হবে। কিন্তু এখনও ক্রেতাদের চাপ পড়েনি।
কামার পট্টি ঘুরে দেখা গেছে, এখনও জমে উঠেছে কামার পট্টি। কেউ দা, কেউ বটি, কেউ ছেনি, কেউ ছুরিসহ নানা সরঞ্জাম তৈরীর কাজ নিয়ে ব্যস্ত সবাই। টুং-টাং শব্দ আর ঘাম জড়ছে কারিগরদের। আগুনের চুল্লিতে লোহা গলিয়ে তাতে বড় বড় হাতুড়ি দিচ্ছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরী করছেন। তবে অনেকের মুখ মলিন। কেউ আবার লোন নিয়ে লাভবান হতে পারবেন কিনা সে চিন্তার ছাপ তাদের। তবে কেউ কেউ বলছেন ঈদের আগেই জমে উঠবে বাজারটি।
কারিগররাা জানালেন, এক কেজি লোহা দিয়ে একটি কিংবা দুটি দা তৈরী হয়। এক কেজি লোহার দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। লোহা থেকে তৈরীকৃত দা বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ২শ’ ৫০ টাকা, চাকু ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা, ছোট চাকু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধামা ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, চাপাতি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং বডি ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঠের মূল্য বেড়েছে। কারন এসব সরঞ্জামের জন্য হাতুলির দরকার হয়। সে তুলনায় শ্রমিক মুজরি ও উৎপাদন খরচের পর তেমন লাভ হয়না। তবে ঈদের আগ মুহুর্তে কেনা-বেচা আরো জমে উঠবে বলে মনে করছেন কারিগরা। এরমধ্যদিয়ে শতাধিক কামার ও কারিগরদের মুখে হাসি ফুটবে এমন প্রত্যাশা তাদের।
কামার শিল্পকে বাচিয়ে তুলতে নানা রকম পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল হোসেন। তিনি বলেন, কামার শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top