সকল মেনু

সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে মীর কাশেম

 1472645970_03

 প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়ে কালক্ষেপণের কৌশলে দেশ-বিদেশে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ মুহূর্তে বাঁচার জন্য এখনও চেষ্টা-তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধাপরাধী ধনকুবের জামায়াত নেতা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার মীর কাশেম আলী। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে ২৫ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশ-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন বিপুল সম্পদের মালিক এ যুদ্ধাপরাধী। এখন আবার ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচার জন্য আইনের ফাঁক-ফোকরে কালক্ষেপণের কৌশল হিসেবে বৃহস্পতিবার ফের প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের জন্য চিন্তাভাবনা করতে আরও সময় চান বলে জানিয়েছেন কারাগার কর্তৃপক্ষকে। প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত জানার জন্য মীর কাশেম আলীর কাছে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট। যৌক্তিক সময়ে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মীর কাশেম আলীর চূড়ান্ত রায় হয়েছে। এখন এ রায় কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এ যুদ্ধাপরাধী তার বিরুদ্ধে বিচারকাজ বন্ধ করা, তাকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য নানা দিক থেকে লবিং করে যাচ্ছেন। তিনি এজন্য প্রচুর টাকাও ব্যয় করেছেন। এখনও তিনি সব কর্মকা- বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন এমনটি মনে করছে না গোয়েন্দা সংস্থা। এ যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে তার লোকজন ও অনুসারী দেশে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। এমনকি কারাগারেও তারা নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। দেশী-বিদেশী যেসব মহলে তিনি ও তার লোকেরা তদ্বির করছিলেন বিচার বানচাল করার জন্য, তারা নানা ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ রায় ঘোষণা করে তার ফাঁসি বহাল রাখার পর হরতাল ডেকেছে তার দল জামায়াত। তাদের ওই চেষ্টা যাতে সফল না হতে পারে এজন্য কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা।

কারাগার সূত্র জানায়, মীর কাসেমের ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কারাগার কর্তৃপক্ষ। আদালতের রায়ের কপি ট্রাইব্যুনাল হয়ে পৌঁছেছে কারাগারে। কারাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহড়া। জল্লাদ প্রস্তুত। রায়ের কপি পৌঁছেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তার আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরাও কাশিমপুর কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। এখন তার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন ম্যাজিস্ট্রেট। তারা তার কাছে জানতে চাইবেন তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাবেন কি-না? জানালে এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আর না চাইলে তার রায় কার্যকর করতে বাধা থাকবে না। সরকার রায় কার্যকর করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। কোন ধরনের কালক্ষেপণের সুযোগ নিয়ে চেষ্টা, তদ্বির, নাশকতা কোনকিছুই কাজে লাগাতে দেবে না সরকার।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, মীর কাশেম আলী তার ছেলেকে বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে কালক্ষেপণের সুযোগ নিচ্ছে। তাকে ফেরত না পাওয়ার আগে তিনি প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা তার কালক্ষেপণের একটি কৌশল বলেই মনে করছে সরকার। এ সময় নিয়ে যে কোন সময় মীর কাশেম ও তার লোকেরা যে কোন ধরনের অঘটন ঘটনোর চেষ্টা করতে পারেন। আর সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

২৫ মিলিয়ন ডলারের কথা জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে বিপুল সম্পদের মালিক জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন এবং দেশ-বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন। বিচার বন্ধে লবিস্ট নিয়োগে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন তিনি। লবিস্ট ফার্মের রসিদ বিবেচনায় নিয়ে রায়ে আদালত এমন কথা উল্লেখ করেছে বলে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মীর কাশেম আলীর রায় প্রকাশের পর এ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি বলেন, লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে শুনানির সময় একটি কাগজ দাখিল করেছিলাম। তবে লবিস্টদের দেয়া রসিদ বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন, মীর কাশেম আলী খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বিচারকে নষ্ট করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

আরও সময় চেয়েছেন মীর কাসেম

বৃহস্পতিবার আবারও প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে মীর কাশেম আলীর সিদ্ধান্ত জানতে তার সঙ্গে দেখা করেছেন কারা কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য আরও সময় চেয়েছেন তিনি। এ ধরনের তথ্য জানিয়েছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিক। তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মীর কাশেম আলীর সঙ্গে দেখা করেন তিনিসহ আরও কয়েকজন কারা কর্মকর্তা। প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছেন তারা। এ সময় চিন্তাভাবনা করার জন্য আরও সময় চান তিনি।

আগের দিন বুধবারও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি-না এ বিষয়ে মীর কাশেমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কারা কর্মকর্তারা। এদিনও তিনি কোন মতামত না দিয়ে চিন্তা করার জন্য সময় চান। এদিন বিকেলে মীর কাশেমের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তার স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, সাদা পোশাকধারী লোকজন ধরে নেয়া নিখোঁজ ছেলেকে ফিরে পাওয়া ছাড়া মীর কাশেম প্রাণভিক্ষার আবেদনের সিদ্ধান্ত দেবেন না। তার পরিবারের অভিযোগ, গত ৯ আগস্ট সাদা পোশাকধারী লোকজন মীর কাশেমের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাশেমকে মিরপুরের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। আহম্মেদ বিন কাশেম তার বাবার মামলার আইনজীবীও। সাদা পোশাকধারী কোন লোকজন তার ছেলেকে ধরে নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে বারবারই অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।

বুধবার বিকেলে কারা অধিদফতরের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইজি প্রিজন সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে যৌক্তিক সময় দেয়া হচ্ছে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রায় পুনঃবিবেচনার আবেদন করেছিলেন যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী। তার ওই আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এতে শেষ হয়ে যায় বিচার প্রক্রিয়া। নিয়ম অনুযায়ী এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন তিনি। প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে অথবা তা নাকচ হলে যে কোন সময় তার ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

যেভাবে দেশ-বিদেশে চেষ্টা চালান মীর কাশেম ॥ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা জামায়াত নেতা ধনকুবের মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-াদেশ থেকে শেষ মুহূর্তে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ পাকিস্তান। এজন্য বিদেশে হাজার কোটি টাকা ডিল করেছে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। মীর কাশেম আলীর স্থাবর-অস্থাবর সকল অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে হলেও মৃত্যুদ-াদেশ থেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবেই পাকিস্তানের বর্তমান তৎপরতা। এ ধরনের খবর দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়, শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর পাকিস্তানের এমনই আঁতে ঘা লেগেছে যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে যা আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল। পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই অবস্থান নিলেও নিজামীর ফাঁসির পর এবং মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ-াদেশ থেকে রক্ষা করার তৎপরতার পেছনে শত শত কোটি টাকার ডিল নিয়ে বিদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের নিয়োগকৃত লবিস্ট।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত দেশ-বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে। তারা বিদেশে থেকেও নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। ২০১১ সালের ১৫ নবেম্বর চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ এমন একটি বিষয় ট্রাইব্যুনালের নজরে এনেছিলেন। যারা বিদেশে জামায়াতের আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন তারই অংশ হিসেবে ওই তিন বিদেশী আইনজীবী স্টিভেন কে, টোবি ক্যাডম্যান ও জন ক্যামেগ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের অপসারণ চেয়ে তার কাছেই ই-মেল করেন। এ বিষয়টি চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালের নজরে আনেন। ট্রাইব্যুনাল এর বিরুদ্ধে আদেশ দিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করতে অর্গানাইজেশন ফর পিস এ্যান্ড জাস্টিস ইনকর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্ম কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস ইনকর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে। এর আগে জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী ও তার ভাই মীর মাসুম আলী ২০১১ সালে তিন লাখ ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসকে নিয়োগ করেছিলেন। এখন যুদ্ধাপরাধীর শীর্ষ পাঁচজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর সর্বশেষ শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ-াদেশ কার্যকরের অপেক্ষায়। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত মীর কাশেম আলীর রায়ের পর প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়ে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আবার প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের কালক্ষেপণের কৌশলে জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা, ধনকুবের, শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীকে ফাঁসির দড়ির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই দেশ-বিদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী ও জামায়াত।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top