সকল মেনু

সব দিক দিয়েই ভালো আফগান সিরিজ

.

জন কেরির বাংলাদেশ সফর নিয়ে খুব আগ্রহ দেখা গেল সাকিব আল হাসানের মধ্যে। কেরি কোথায় গেলেন, কার সঙ্গে দেখা করলেন, কী বললেন—অনেক কৌতূহল! মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক দিনের সফরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঢাকা স্থবির হয়ে গেছে শুনে অবিশ্বাসী কণ্ঠ সাকিবের, ‘কী বলেন! গুলশানের দিকটা তো ফাঁকাই দেখলাম!’
কাল সকালে এসে কেরি সন্ধ্যায়ই ঢাকা ছেড়েছেন। তাঁর সফরের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে সাকিব নিশ্চয়ই রাতে চোখ রেখেছেন টিভি পর্দায়, ঢুঁ মেরেছেন ইন্টারনেটে। তবে চেনা জগৎ, মানে ক্রিকেটের ‘অতিথি’দের নিয়ে সাকিবের আগ্রহ বরাবরই সীমিত। তারা আসবে, খেলবে—এই তো!
ব্যতিক্রম আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা আসবে দলটি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২৫ ও ২৮ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর হবে সিরিজের তিনটি ওয়ানডে। তার আগে ফতুল্লায় ২৩ সেপ্টেম্বর  প্রস্তুতি ম্যাচ। আফগানিস্তান আসায় একটি বাড়তি সিরিজ খেলার সুযোগ তো হচ্ছেই, ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতিও পাচ্ছে পূর্ণতা। হুট করে সামনে আসা সিরিজটাকে তাই সব দিক দিয়েই ভালো মনে হচ্ছে সাকিবের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রায় ছয় মাসের বিরতি কাটাচ্ছে। গত ২০ জুলাই থেকে শুরু অনুশীলন ক্যাম্পে মরচে কতটা ঝরল, তা বোঝার দারুণ উপলক্ষ হতে পারে আফগানিস্তান সিরিজ। ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোরও সুযোগ। দক্ষিণ এশিয়ার উঠতি দলটিকে স্বাগত জানিয়ে সাকিব কাল মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘আফগানিস্তান সিরিজ খেলতে এখানে আসছে, এটা খুবই ভালো খবর। এটা যেমন একটা ভিন্ন সিরিজ হবে, তেমনি তাদের সঙ্গে খেলে আমাদের ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতিটাও ভালো হবে।’
আগামী দুই বছর বাংলাদেশ দলের সামনে প্রচুর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট—ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা সে আভাসই দিচ্ছে। ব্যস্ত যাত্রার দ্বারোদ্‌ঘাটন হওয়ার কথা ছিল ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে। এখন তা হয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলে এবং উপলক্ষটা আনন্দদায়ী হওয়ার সম্ভাবনাই এতে বেশি দেখছেন সবাই। দলের সব অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিশ্বাস, এই সিরিজ বাংলাদেশকে দিচ্ছে ‘শুভযাত্রা’র সুযোগ। কাল তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘লম্বা বিরতির পর প্রথম ম্যাচটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার চেয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলা অনেক বেশি সুবিধাজনক। আপনি ঘরোয়া ক্রিকেট যতই খেলেন, বড় দলের বিপক্ষে খেলার আগে প্রস্তুতির জন্য এসব ম্যাচই বেশি কাজে লাগে। আর আফগানিস্তানও ভালো দল। তাদের সঙ্গে ভালো খেলে শুরু করতে পারলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’
আফগানিস্তান সিরিজ ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে মাহমুদউল্লাহকেও, ‘আমরা আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলছি না প্রায় এক বছর। মাঝে শুধু টি-টোয়েন্টি খেলেছি। বড় দলের বিপক্ষে খেলার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে আমাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করে দেবে।’ আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড দুই দলের বিপক্ষেই ওয়ানডে সিরিজ জেতা সম্ভব বলে তাঁর বিশ্বাস। আর এই দুটি সিরিজ পরপর জিতলে টেস্টেও নাকি কাঁপিয়ে দেওয়া যাবে ইংল্যান্ডকে।
মুশফিকুর রহিম কাজটা অত সহজ ভাবছেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট তাঁর দৃষ্টিতে বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ক্রমবর্ধমান পারফরমারের সংখ্যা আশাবাদী করছে টেস্ট অধিনায়ককে, ‘আগের তুলনায় আমাদের পারফরমার এখন অনেক বেশি। আত্মবিশ্বাসও তাই অনেক ভালো। শ্রীলঙ্কার মতো হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে টেস্টেও ভালো ফল করা সম্ভব।’
সূচিতে আফগানিস্তান সিরিজের সংযুক্তিতে ইংল্যান্ড সিরিজটা হয়ে উঠেছে একটু দূরের বিষয়। অন্যদের মতো মুশফিকের চোখও তাই আপাতত আফগানদের ওপর। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে তিন ওয়ানডের ‘মহড়া’ হবে ভেবে মুশফিক খুশি, একই সঙ্গে সতর্কও, ‘আফগানিস্তান খুব ভালো দল। তাদের হারানো সহজ হবে না।’
মুশফিকের কাছ থেকেই যেন কথার ‘ব্যাটনটা’ নিলেন  মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘ওদের পর্যায়ে এ মুহূর্তে আফগানিস্তান সেরা দল। আমি তো তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট হবে বলেই মনে করছি। নিজেরা ভুল করলে তাদের হারানো কঠিন হবে।’ ইংল্যান্ডের আগে আফগানিস্তানকে সামনে পাওয়ায় অন্য সবাই খুশি হলেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক মুদ্রার উল্টো পিঠটাও ভেবেছেন, ‘আমরা এক বছর পর ওয়ানডে খেলব। ইংল্যান্ড বা আফগানিস্তান যাদের বিপক্ষেই খেলা হোক, শুরুতে একটু জড়তা থাকবেই। সেখানেই ভয়…।’

পরিসংখ্যানও আফগানদের বিপক্ষে পুরোপুরি নির্ভার ক্রিকেটের আহ্বান জানায় না। ওয়ানডেতে এ পর্যন্ত দুবার মুখোমুখি হয়ে দুই দলেরই জয় একটি করে। অবশ্য আফগানরা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলে বাংলাদেশের  ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতি হবে আরও সুষম। আফগানিস্তান সিরিজ তাই আসলেই সব দিক দিয়ে ভালো। জিতলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলেও পাওয়া যাবে সতর্কবার্তা।

আমি তো তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট হবে বলেই মনে করছি

* মাশরাফি বিন মুর্তজা

আফগানিস্তান খুব ভালো দল। তাদের হারানো সহজ হবে না

* মুশফিকুর রহিম

এটা যেমন একটা ভিন্ন সিরিজ হবে, তেমনি তাদের সঙ্গে খেলে আমাদের ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতিটাও ভালো হবে

*সাকিব আল হাসান

লম্বা বিরতির পর প্রথম ম্যাচটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার চেয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলা অনেক বেশি সুবিধাজনক

* তামিম ইকবাল

বড় দলের বিপক্ষে খেলার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে আমাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করে দেবে

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top