সকল মেনু

দুই কিলোমিটার যাত্রা এবার মরদেহ ভেঙে পুটলিতে বেঁধে

4289_india হটনিউজ ডেস্ক: টাকার অভাবে স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে দানা মাঝির ১০ কিলোমিটার হেঁটে যাবার খবর প্রকাশের রেশ কাটতে না কাটতেই একই ধরনের আরও একটি ঘটনা ঘটেছে ভারতের ওডিশা রাজ্যেই।

অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় হাসপাতাল থেকে মরদেহটি কোমড়ের অংশের হাড় ভেঙে পুটলিতে বেঁধে পরে বাঁশে করে ঝুলিয়ে দুই কিলোমিটার হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন হাসপাতাল কর্মীরাই। দানা মাঝির ঘটনার মতই এরও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।

এই ভিডিওটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় তৈরি করেছে। সমাজের অন্যায্যতা, গরিব মানুষের প্রতি বৈষম্য আর মরদেহের অসম্মানের কারণে ফুঁসে উঠেছে লাখো মানুষ। ভিডিওর নিচেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তীব্র সমালোচনা করে নানা বক্তব্য দিচ্ছে মানুষ।

যেভাবে ঘটনাটি ঘটলো

সালামানি বারিক নামে ৭৬ বছর বয়সী এক নারী গত বুধবার মারা যান ট্রেনে কাটা পড়ে। এরপর তার মরদেহ নেয়া হয় বালাশ্বর জেলার সরো শহরের একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে তার দেহটি রাখা হয় কয়েক ঘন্টার জন্য।

শহরটিতে ময়নাতদন্তের সুবিধা না থাকায় মরদেহটি ৩০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটিতে তখন কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। তাই রেলওয়ে পুলিশ মরদেহটি ট্রেনে করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

অটোরিকশায় করে লাশটি ট্রেন স্টেশনে নিয়ে খরচ অনেক বেশি পড়বে। তাই পুলিশ দুজন সুইপারকে লাশটিকে স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে বলে। আর লাশটি বহন করতে সুবিধা হবে এই কারণে তারা মরদেহটির কোমড়ের হাড় ভেঙে ফেলে। তারপর পুটলির মতো বানিয়ে একটি বস্তায় ঢোকায়। এরপর বস্তাটি একটি বাঁশের সঙ্গে বেঁধে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী স্টেশনের দিকে রওয়ানা হয় দুই সুইপার।

সালমানি বারিকের ছেলে রবীন্দ্র বারিক বলেন, ‘আমার মায়ের হাড় ভেঙে তারা বহন করছে। আমি অসহায়, তাই করার কিছুই নাই। কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’

ওডিশার মানবাধিকার কমিশন বালাশ্বর জেলা কর্তৃপক্ষ এবং রেলওয়ে পুলিশের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে।

লাশ নিয়ে দানা মাঝির হেঁটে যাওয়ার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ

টাকার অভাবে গরিব দানা মাঝিতে তার স্ত্রীর মরদেহ কাঁধে করে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে বয়ে নিতে হাঁটতে হয়েছিল ১০ কিলোমিটার। এরপর এক টেলিভিশন সাংবাদিক ঘটনাটি দেখেন এবং তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন করে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। নইলে হয়ত হাসপাতাল থেকে দানার বাড়ি পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারই হাঁটতে হতো তাকে।

বিনা খরচে লাশ পরিবহনের জন্য ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ‘মহাপরায়না’ স্কিম চালু করেছে প্রাদেশিক সরকার। এই স্কিমের আওতায় ৩৭টি সরকারি হাসপাতালে মৃতদের বহনের জন্য পরিবহন সেবা রয়েছে। কিন্তু দানা মাঝির যখন এই সেবা পাওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল তখন তিনি তা পাননি।

এই ঘটনাটি গণমাধ্যমে আসার পর দারুণ চটেছেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েক। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এই ব্যাপারে কঠিন পদক্ষেপ নেব।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top