সকল মেনু

ধর্ষণের শিকার নারীর দ্বি-অঙ্গুলি বিশিষ্ট পরীক্ষা সেকেলে: চিকিৎসকরা

এখনই এই পদ্ধতি বন্ধ করে দিলে ভিকটিম বিচার পাবে না: হাইকোর্ট
ধর্ষণের শিকার নারীর দ্বি-অঙ্গুলি বিশিষ্ট পরীক্ষা সেকেলে: চিকিৎসকরা
ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ‘দ্বি-অঙ্গুলি বিশিষ্ট’ পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয় বলে হাইকোর্টে অভিমত দিয়েছেন পাঁচজন ফরেনসিক মেডিকেল বিশেষজ্ঞ। তারা আদালতে বলেছেন, এ পদ্ধতি সেকেলে। যৌন নির্যাতনের পরীক্ষার আধুনিক অনেক পদ্ধতি আবিস্কার হয়েছে। এ পদ্ধতি অনৈতিক বলেও অভিমত দেন তারা। তবে আদালত বলেছেন, বিকল্প পদ্ধতি না আসা পর্যন্ত এখনই এই পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। যদি এই পদ্ধতিতে মেডিকেল পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে যারা ধর্ষণের শিকার তারা তো বিচার পাবেন না। আদালত বলেন, আপনারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সুতরাং আপনাদের ভেবেচিন্তে মতামত দিতে হবে। শুনানি শেষে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে ‘দ্বি-অঙ্গুলি বিশিষ্ট’ পরীক্ষা পদ্ধতির ওপর মত দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক প্রধান ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী, একই হাসপাতালের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইল ল্যাবরেটরির প্রধান ডা. সাফিউর আখতারুজ্জামান, মিরপুরের ডেল্টা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. জাহিদুল করিম আহমেদ, বারডেম হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেসর ডা. গুলশান আরা এবং  ইন্দো-পেসিফিক এসোসিয়েশন অব ল, মেডিসিন এন্ড সাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজাহিরুল হক। চিকিৎসকদের মতামত দেওয়ার পর আদালত বলেন, আইনগতভাবে পদ্ধতিটি আপাতত দৃষ্টিতে বৈধ বলে মনে হবে। তবে এই পদ্ধতিটিওতো এক ধরণের ধর্ষণ কিনা সেটা চিন্তা করতে হবে? এ পদ্ধতিতে ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা পুরুষ চিকিৎসক নাকি নারী চিকিৎসক করছেন সেটাও দেখার বিষয়। তবে যতদুর জানা যায়, সারাদেশে অধিকাংশ পরীক্ষাই করেন পুরুষরা। এটা আরো উদ্বেগের। এজন্যই বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনাদের (চিকিৎসক) সুনির্দিষ্ট মতামত প্রয়োজন। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের অভিমত লিখিত আকারে আদালতে দাখিল করতে তিন মাস সময় চান। আদালত সময় মঞ্জুর করেন। গতকাল রিটকারী পক্ষে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাষ্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ নামে ৬টি পৃথক সংগঠন এবং দুইজন ব্যাক্তি ধর্ষণের শিকার নারীর ‘দ্বি-অঙ্গুলি বিশিষ্ট’ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ণে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কমিটি গঠন করে আগামী তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এরপরই বিশেষজ্ঞ কমিটি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিটির দাখিল করা ওই নীতিমালায় ধর্ষিত নারীর সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক, পুলিশসহ সবাইকে কেমন আচরণ করতে হবে তা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ‘দ্বি-অঙ্গুলি বিশিষ্ট’ পদ্ধতিতে কেউ মেডিকেল পরীক্ষা করতে না চাইলে জোর করে না করাতে, ধর্ষিতার রিপোর্টে ধর্ষণের বিষয় ছাড়া নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করে এ জাতীয় শব্দ ব্যবহার না করতেও বলা হয়। এই পদ্ধতিকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্য কোন পদ্ধতির প্রবর্তনের ব্যবস্থা করার বিষয় তুলে ধরা হয় ওই নীতিমালায়।
সম্প্রতি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে মামলাটি রুল শুনানির জন্য আসে। শুনানির এক পর্যায়ে রিটকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত চেয়ে গত ৭ আগষ্ট একটি আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত শুনতে চান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top